বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার ২০১৫ সালের অক্টোবরে ‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। ফাস্ট ট্র্যাকের আওতাভুক্ত করে এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বছর দেড়েক না যেতেই ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে।
তাতে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ২৫০ শতাংশ বেশি। আর সময় বাড়ানো হয়েছে দেড় বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নে রাবনাবাদ চ্যানেলের তীরে এটি নির্মিত হবে। এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও মংলা সমুদ্রন্দর থাকলেও তা গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। চট্টগ্রামে মোট কন্টেইনারের ৭০ শতাংশ ও মংলায় ৮ শতাংশ হ্যান্ডেলিং করা হয়। আবার ওই ২ বন্দরে মাদার ভেসেলও প্রবেশ করতে পারে না। তাই অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে মালামাল ও কন্টেইনার পরিবহনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের নভেম্বরে গভীর সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধন করেন। তা বাস্তবায়ন করতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হলে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরটি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।
সম্পূর্ণ সরকারি তহবিল থেকে এতে ব্যয় ধরা ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। সূত্র আরও জানায়, প্রথমে ১৬ একর জায়গার ওপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা যেমন পন্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ অন্যান্য উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত পণ্য ওঠা-নামা বা খালাস করার সুযোগ তেমন নেই। অপরদিকে, পায়রা বন্দর দিয়ে ট্রাক, লরি এবং অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি পণ্য পরিবহন করার জন্য পায়রাবন্দর টার্মিনাল থেকে বরিশাল পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত কোনো সংযোগ সড়ক নেই। বন্দর এলাকায় বিদ্যমান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সরু রাস্তাটি খেপুপাড়া প্রধান সড়ক থেকে বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ।
এ রাস্তাটি সরু ও দুই দিকে বসতবাড়ি, গাছপালা ও কলাপাড়া বাজার রয়েছে। এ অবস্থায় এ সরু রাস্তা দিয়ে আমদানি রফতানিকৃত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব নয়। এ কারণে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটারের চারলেন বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ করা হবে। রাস্তাটি বরিশাল পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহসড়কের রজপাড়া হতে শুরু হয়ে পায়রাবন্দরে শেষ হবে। এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে এর আর্থিক অনুমোদন পেতে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় দু’টি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। এর একটি হলো ‘ক্ষুদ্র পরিসরে পায়রাবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’।
অন্যটি রজতপাড়া-পায়রা সমুদ্রবন্দর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এর ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুটি প্রকল্প প্রস্তাব একীভূত করে ‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প দুটি পুনর্গঠিত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ১৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ বর্গফুট ওয়্যার হাউস নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার রামনাবাদ ও কালীগঞ্জ নৌপথ ড্রেজিং, পাঁচ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, দুটি হাইস্পিড বোট, ৫টি পিস্তল, ১০০টি শটগান ও ২ হাজার রাউন্ড গুলি সংগ্রহ, দুটি পাইলট বোট, একটি টাগ বোট, একটি বয়া লেইনিং ভেসেল, একটি সার্ভে ভেসেল ও দুটি পন্টুন সংগ্রহ, ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম করা হবে।
এছাড়া ১৬ একর ভূমির ওপর বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, চারলেন বিশিষ্ট রজপাড়া-পায়রা সমুদ্রবন্দর সড়ক নির্মাণ এবং সংযোগ নদীর ড্রেজিংও করা হবে। এসব বাস্তবায়ন করতে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় অনুমোদন দেন। এরপর প্রকল্পটি কার্যকর করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে কিছু কাজও শুরু হয়েছে।
তাতে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ২০১৮ সালের জুনে শেষ হবে না। তাই গত ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৮ কোটি ১ লাখ টাকা। যা আগের চেয়ে ২ হাজার ৮১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ২৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। আর সময় দেড় বছর বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।”