মিয়ানমারে একটি স্কুলে তারাবির নামাজ আদায় করায় মুসল্লিদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে যে স্কুলটিতে নামাজ পড়া হয়েছিল, সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত বুধবার (৩১ মে) দেশটির বাণিজ্যিক শহর ইয়াংগুনের স্থানীয় একটি স্কুল এবং তার পাশের রাস্তায় তারাবি নামাজ পড়ছিল প্রায় ৫০জন মুসলিম। প্রথমে স্থানীয় তিন মুসলিম নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে কতৃপক্ষ। এর পর সব মুসল্লির বিরুদ্ধেই মামলা করে পুলিশ। নাম না প্রকাশের শর্তে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে স্থানীয় মুসলিম নেতা জ মিন লাত বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এই মাসটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দশক ধরে স্কুলগুলো আমরা নামাজ আদায় করে আসছি। ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে আমাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলো।
স্থানীয় আরেক মুসলিম খিন সোয়ে বলেন, এটি আমাদের মসজিদ এবং স্কুল। জানি না, কবে আবার খুলে দেয়া হবে।
এর আগে গত এপ্রিলে মুসলিমরা দুটি ইসলামি স্কুলকে নামাজের কাজে ব্যবহার করে- বৌদ্ধ চরমপন্থিদের এমন অভিযোগের মুখে ওই স্কুল দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সাময়িকভাবে এগুলো বন্ধ করেছে। তবে কবে নাগাদ খুলে দেয়া হবে, সে সম্পর্কেও কিছু জানায়নি তারা।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের একটি মাদরাসায় প্রতিবেদন করতে গেলে বার্তাসংস্থা এএফপির দুই সাংবাদিককে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে দুই কর্মকর্তা।
বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, এমন অভিযোগের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল। গত বছরের অক্টোবরে দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন সীমান্ত পুলিশের ওপর হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ অভিযান আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে গণহত্যার। জাতিসংঘ এ অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে বিনাশ বলে আখ্যায়িত করেছে।
সংস্থাটির মতে, বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা অন্যতম। সামরিক সরকারের সময়ে নানাভাবে দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে এই সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠিটিকে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। তারা দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমারে বৈষম্যের শিকার। সামরিক বাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষপটে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।