জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় আটকে রেখে আগুনের ছ্যাকা দেয়া ও শারিরিক নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী মোছাদ্দেক সিকদারকে (১৯) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (১০ জুন) বেলা ২টায় ভর্তি হওয়া মোছাদ্দেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সার্জরী ইউনিট-১ ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম মশিউল আযম।

হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ টিপুর ছেলে তন্ময় সিকদার ১১ দিন ধরে আটকে রেখে মোছাদ্দেকের ওপর এমন নির্যাতন চালায়।

মোছাদ্দেক মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আজিমপুর গ্রামের কামাল সিকদারের ছেলে।

নির্যাতনের শিকার মোছাদ্দেকের মা মরিয়ম বেগম বরিশালটাইমসকে বলেন- তিনি রাজধানীর গার্মেন্টেসে এবং স্বামী কামাল হোসেন বনানীর ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকুরী করার সুবাদে ঢাকায় থাকেন। তাদের একমাত্র সন্তান  মোচ্ছাদেক বাড়িতে দাদির কাছে থেকে পড়াশুনা করেন। একই স্কুলে পড়ালেখা করায় এক ক্লাশ সিনিয়র হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে তন্ময় সিকদারের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

এই সুবাদে তাদের বাড়িতে তন্ময়ের আসা যাওয়া ছিল। ১১দিন আগে মোছাদ্দেককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তন্ময়। মোবাইলে ছেলে সাথে কথা হলে মা আমি ভালো আছি এমন কথা বললেও তিন দিন আগ থেকে  মোছাদ্দেক ফোন ধরে না।  শুক্রবার (০৯ জুন) বেলা ১২ টায় তন্ময় মোটরসাইকেলযোগে আহত মোছাদ্দেকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। মেছাদ্দেকের দাদী নূরজাহান বেগম আহত নাতিকে পাশ্ববর্তী মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান পুত্র তন্ময়ের হুমকীর কারণে ফের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নেন।

ছেলে এমন খবর পেয়ে শুক্রবার ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। অবস্থা বেগতিক হলে শনিবার বেলা ২টায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে  এনে ভর্তি করান মোছাদ্দেককে।
মরিয়ম বেগম আরো বলেন, গোপনে বরিশাল এনে হাসপাতালে ভর্তি করায় নির্যাতনকারী তন্ময় সিকদার তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা করেছে এবং হত্যার হুমকী দিয়ে এসেছে। তার ছেলে এসএসসিতে  ফোর পয়েন্ট জিরো ফাইভ পেয়ে পাশ করেছে, এখন রাজধানীর আজিমপুর কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা। আটকে রেখে নির্যাতন করায় ভর্তির তারিখ পাড় হয়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

এনিয়ে আহত মোছাদ্দেকের সাথে আসা ফুপা মো. ফজলে করিম বলেন, তন্ময় সিগারেট দিয়ে স্যাকা,কুপিয়ে নানা ভাবে মোছাদ্দেকে নির্যাতন করেছে। বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাশালী হওয়ায় এখন তারা হুমকীর মুখে তাই পালিয়ে বরিশালে এনে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
রোগির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সার্জরী ইউনিট-১ ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম মশিউল আযম বলেন, রোগির শরীরে আগুনে পোড়ায় অনেক চিহ্ন রয়েছে।  নির্যাতনের কারণে তার কীডনীতে সমস্যা তৈরী হয়েছে কিনা এই পরীক্ষা আর মাথায় আঘাত থাকায় তারা সিটিস্ক্যান করাতে দিয়েছেন। এই প্রতিবেদন পেলেই বলতে পারবেন তার অবস্থা সম্পর্কে। তবে রোগির সার্বিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান এই চিকিৎসক।

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনা শুনেছেন কিন্তু তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার কথা বলেন। এই ঘটনায় হিজলা উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপুকে মুঠোফোনে বার কয়েক কল দিলেও তিনি গ্রহণ করেননি।”