চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৩২ মাসে মূল পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যেই ১৪টি পিয়ার নিয়ে দেখা দিয়েছে নকশা জটিলতা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, বাকি পিয়ারগুলোর কোনোটির কাজই সম্পূর্ণ হয়নি। অগ্রগতি বিবেচনায় ছয় মাস পিছিয়ে আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ অবস্থায় ২০১৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ, আইএমইডি ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
গত ফেব্র“য়ারির শেষ দিকে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আইএমইডি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪২টি পিয়ারের মধ্যে পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে মাত্র চারটির। আংশিক সম্পন্ন হয়েছে তিনটি পিয়ারের পাইলিং। এছাড়া ১৪টি পিয়ারের পাইল ডিজাইন সংশোধন করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিশ্র“তি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আইএমইডির ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মার্চ পর্যন্ত ব্যয়ের তথ্যও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
তাতে দেখা যায়, সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।
এর বিপরীতে উল্লিখিত সময় পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা। অর্থাত্ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ অর্থ কম খরচ হয়েছে।
অনুমোদিত আরডিপিপির পরিকল্পনার তুলনায় পিছিয়ে থাকা অগ্রগতি তাই ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে আইএমইডি। পাশাপাশি যেসব পিয়ারের ডিজাইন এখনো চূড়ান্ত হয়নি, দ্রুত তা সম্পাদন করার কথা বলেছে।
সর্বোপরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানের প্রকৌশলী প্যানেলের মাধ্যমে কাজের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
১৪টি পিয়ারের নকশা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বলে জানান পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। জটিলতা যেমন আছে, সেগুলো সমাধানের নানা পথও আছে। সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা বাইরে থেকে প্রকৌশলী এনেছি। তারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এ ১৪টি পিয়ারের নতুন নকশা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এখন পর্যন্ত আমরা যে গতিতে কাজ সম্পন্ন করছি, তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
গত শুক্রবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাওয়া প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-১ ও জাজিরা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-২-এর আওতায় চলছে সেতুর নির্মাণকাজ। নদীর তলদেশের মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এজন্য বসানো হয়েছে একাধিক ক্রেন।
এ প্রান্তের সাতটি পিয়ারের নকশায় দেখা দিয়েছে জটিলতা। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে মাঝনদী পর্যন্ত বিশাল চর থাকায় নদীর মূল স্রোত এ অংশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে। এ প্রান্তের আরো সাতটি পিয়ারে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে মাওয়া প্রান্তের প্রথম (১ নম্বর) পিয়ারটির কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে পদ্মাসেতু প্রকল্পের এক্সপার্ট প্যানেলের সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বিশ্বের জটিল প্রকল্পগুলোর অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতু। আইএমইডির প্রতিবেদনে প্রকল্পের কাজ ছয় মাস পিছিয়ে থাকার যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা কিছুটা হলেও সঠিক। এখনো নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে।
১৪টি পিয়ারের নতুন করে নকশা করা হচ্ছে। আগের নকশায় প্রতিটি পিয়ারে ছয়টি পাইল হওয়ার কথা ছিল। নতুন নকশায় পাইলের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি পিয়ারগুলোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নকশা প্রণয়নের। দ্রুত কাজটি শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম বলে জানান প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৪৩ শতাংশ সম্পন্ন করার লক্ষ্য ছিল। এ হিসাবে মূল সেতুর কাজ ৩ শতাংশ পিছিয়ে।
পিছিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে যে নকশা তৈরি হয়েছিল, বাস্তবায়নের সময় সেটির কোথাও কোথাও অসামঞ্জস্য দেখা দিচ্ছে। এ কারণেই নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।”