নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে বরিশালে লাখো জনতা বিজয় মিছিল করেছে। এবং তারা বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র কালিবাড়ির বাসাসহ সরকারি কয়েকটি ভবন ভাঙচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে নিয়ন্ত্রণ তাদের বাইরে ছিল, জনতার ঢল সামাল দেওয়ার পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল না। কারফিউ ভেঙে লাখো জনতা রাজপথে নেমে আসে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকার একদিনে কারফিউ জারি করে। কিন্তু সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভ থামেনি বরিশালসহ সারা দেশে কোটি কোটি জনতা রাজপথে নেমে আসে। সকালে কাউনিয়া থানাধীন এলাকায় পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়। এরপর সেখানে সেনাবাহিনী গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাদের শান্ত করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। বেলা ৩টার দিকে সেনাপ্রধান সকল দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন এবং তিনি জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। অবশ্য এর আগেই সেনাবাহিনীর একটি বিমান শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগে সহযোগিতা করেছে। এই খবরে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে জনতা, যার সংখ্যা কোটিতে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হয়। অনুরুপভাবে বরিশালের রাজপথেও নেমে আসে বিক্ষুব্ধ জনতা। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে তারা বিজয় মিছিল করে। এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র কালিবাড়ির বাসাসহ এনেক্স ভবন, উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকায় সৈয়দ আনিছুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাকিরের বেলসপার্ক লাগোয়া অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক এসএম জাকির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বেলসপার্কসংলগ্ন জেলা প্রশাসকের জমিতে ইউরো কনভেনসন হলসহ একটি রেস্টুরেন্ট খোলে। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে সে সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুকের কাধে ভর করে স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে বরিশালের বিভিন্ন থানায় সাংবাদিক নির্যাতনসহ একাধিক মামলা হলেও আইনগত কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। বরং যে সকল সাংবাদিকেরা তার এমন অনাচারের প্রতিবাদ করেছেন, তাদের ওপর হামলা করাসহ মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এই জাকিরের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা তারিকুল ইসলামের তরিকের ওপরও হামলা হয়, এমনকি সে তখন থানা পুলিশকে তরিকের বিরুদ্ধে মামলা দিতে সহযোগিতা করে।

গতকাল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে লাখো জনতা মাঠে নামলে সাদিক আব্দুল্লাহ কালিবাড়ির বাসায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এবং খবর আসে বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্থাপনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসা-বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চলছে। লাখো জনতা রাজপথে নেমে আসায় এর আগে মাঠ থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়। অথচ এই পুরোটা সময় ধরে কারফিউ চলছিল। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতার স্রোত সেই বাধা উপেক্ষা করেছে, যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার পতনে সহায়ক হয়। এই উদ্ভুদ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গতকাল রাতে সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশনা দেন। যদিও রাত ৩টা পর্যন্ত এই বাহিনীর বরিশাল শহরে দেখা যায়নি।

এর আগে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে এবং সেখানে সিদ্ধান্ত হয় খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

গভীর রাতে পুলিশ জানিয়েছে, পরিবেশ তাদের অনুকূলে আসতে শুরু করেছে, মাঠে সেনাবাহিনীও নেমেছে। কিন্তু এর আগে কী ঘটেছে তা জানা নেই। তবে তথ্য এসেছে, শহরের অসংখ্য স্থাপনা ও বেশকিছু ভবন ভাঙচুর করাসহ আগুন লাগানো হয়েছে।

বরিশাল কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কালিবাড়ি রোডে সাবেক সিটি মেয়রের বাসায় কারা যেনো আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে পুরো বাসাটি পুড়ে যায়, যার মধ্যে তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর বাইরে বিস্তারিত কিছু নিশ্চিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে সাংবাদিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক নিপীড়নকারী আওয়ামী লীগ নেতা জাকির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বরিশাল প্রেসক্লাবকে বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসানত আব্দুল্লাহ’র পিতার নামে নামকরণ করে। এমনকি প্রেসক্লাব প্রবেশপথে সে আওয়ামী লীগের পিতা শেখ মুজিবর রহমানের একটি বিশাল আকৃতির ম্যুরালও নির্মাণ করে, যা গতকাল বিক্ষুব্ধ লাখো জনতা ভেঙে ফেলে দিয়েছে।

এই জাকিরের অত্যাচরে কলেজ এভিনিউবাসী রীতিমত ওষ্ঠাগত। বিক্ষুব্ধ জনতা তার বাসার সম্মুখে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু সে বাসায় ছিল না। জানা গেছে, দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে সে সাদিক আব্দুল্লাহ’র সাথে কালিবাড়িতে অবস্থান করছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সে সাদিক আব্দুল্লাহ’র সাথে পালিয়ে গেছে।

কলেজ এভিনিউ’র বাসিন্দা বিএনপিপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান এবং এলবার্ট রিপন বল্লভ জানান, জাকির আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০ নং ওয়ার্ডে ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছে। সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুক এবং সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র কাধে ভর করে সাংবাদিক নীপিড়নসহ দেদার ভূমিদস্যু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের খবরের পর তার পালিয়ে যাওয়া রোধ করতে লাখ লাখ মানুষ বাসার সম্মুখে যায়। কিন্তু শোনা গেছে, সন্ত্রাসী জাকির আগেই সাদিক আব্দুল্লাহ’র সাথে গাড়িযোগে বরিশাল ছেড়েছে।’