নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল; দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পটুয়াখালীর বাউফলে প্রকাশ্যে একাধিক পথসভা, দোয়া-মোনাজাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়েছে। শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শফিকুল ইসলাম মাসুদ উপজেলার বগা ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছালে নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের আগমণ উপলক্ষে পথসভা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছয় ব্যক্তির স্মরণে দোয়া-মোনাজাত, মন্দির পরিদর্শনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তিনি সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি বগা বন্দরে পথসভা করেন। এ সময় তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা স্বাধীন দেশে পরাধীন ছিলাম। অপরাধ না করেও কয়েক শ’ মামলার আসামি হয়েছি, অন্যায়ভাবে তড়িগড়ি করে ওই সব মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।

বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। যাদের কারণে আপনারা ১৭ বছর কষ্ট করেছেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহর নিয়মানুযায়ী তাদের ক্ষমা করে দিবেন। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ হব না, কোনো মানুষকে কষ্ট দিব না।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাউফল উপজেলা সদরের হিন্দু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি মন্দিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, গোটা বাউফলবাসী একটি পরিবার। সেখানে কে হিন্দু? কে মুসলমান? কে কোন দলের? তা দেখার কোনো সুযোগ নাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। আমরা স্বাধীন হয়েছি। সেখানে কে সংখ্যালঘু, কে সংখ্যাগুরু এ জাতীয় কোনো বৈষম্যের ঠাই হবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো সাথে কেউ অন্যায় করলে, জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিরোধ করব ইনশাল্লাহ।

বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাউফলের ছয় শহীদ ব্যক্তির স্মরণে দোয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি নিহত ছয় ব্যক্তির প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

এ সময় শফিকুল ইসলাম বলেন, যা সব রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েও করতে পারেনি, তা করে দেখিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা। তাদের নেতৃত্বেই দুঃশাসন ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, স্যালুট জানাই তাদের।

তাদের এই ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না। তবে তারা যদি এই নতুন বাংলাদেশে আবার অন্যায় দেখে তখনো প্রতিবাদ করবে এবং অন্যায়কারীদের পতন ঘটিয়ে ছাড়বে। তাই সাবধান, কেউ যেন বলতে না পারে, বর্তমানের চেয়ে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারই ভালো ছিল। জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলামের বাড়ি বাউফল উপজেলার মদনপুরা গ্রামে। ২০০৯ সালের পর বাউফলে জামায়াতের প্রকাশ্যে এভাবে সভা-সমাবেশ করতে দেখা যায়নি।