আজ ১৭ মে ঝালকাঠির কাঠিপাড়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাপুর উপজেলার কাঠিপাড়া ঠাকুরবাড়ীর জঙ্গলে প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে থাক হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক লোককে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক হানাদাররা নির্বিচারে হত্যা করে।

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এখানকার গণকবর দু’টি সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।নিহতদের পরিবাররাও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। রাজাকাদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের হলেও তারা বাদিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা না লড়তে বাধ্য করে রেখেছে।

সেদিনের স্বজন হারানো কাঠিপাড়া গ্রামের অমূল্য কুমার হালদার, শান্তি রঞ্জণ রড়াল, পরিমলচন্দ্র মন্ডল, শেফালী হালদার, রানী হাওলাদারসহ অনেকে জানান, পাক বাহিনী আসবে আগে থেকেই এমন খবর পেয়ে রাজাপুর উপজেলার কাঠিপাড়া, নারিকেল বাড়িয়া ও নৈকাঠি এই তিন গ্রামের লোকজন ঠাকুর বাড়ির বিশাল জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় রাজাকাররা পাক হানাদরদের এ খবর দিলে তারা ঐ জঙ্গল ঘেরাও করে হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে পুরুষদের হত্যাকরে, নরীদের উপর চলায় অমানুষিক নির্যাতন। পাক হানাদাররা চলে গেলে এলাকার বেঁচে থাকা লোকজন লাশগুলো দুটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।

ওই ঘটনার সাক্ষী মালতী রানী মন্ডল জানান, তিনি প্রাণের ভয়ে দুটি শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী ধীরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রীর সঙ্গে ঠাকুরবাড়ীর জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু পাকবাহিনী তার সামনেই তার স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলে। এ ভাবে মায়ের সামনে তার ছেলেকে, স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে, এবং ছেলে-মেয়ের সামনে তাদের পিতাকে গুলি করে মেরে ফেলে পাক হানাদার বাহিনী।

আজও নিহতদের স্বজনদের গণকবরের পাশে গিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। তাদের আক্ষেপ স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও গণকবর দুটি সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় ২০১১ সালে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী এ.এইচ.এম. খায়রুল আলম জানান, ২০১১ সালে স্থানীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। গণতদন্ত কমিশন ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আলামত হিসেবে গণকবর থেকে তোলা শহীদদের কঙ্কালগুলো নিয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে রাজাকার কমান্ডার হেমায়েত হোসেন নূরু , মিল্লাত জমাদ্দার, খালেক মাষ্টারসহ অন্যরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার লড়াই থেকে বাদি পক্ষকে বিরত থাকতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজাপুর উপজেলা কমান্ডার শাহ আলম নান্নু জানান, কয়েক বছর আগে একটি গণকবর খুড়ে ২৪টি মাথার খুলি ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে স্থানটি সংরক্ষণের চেষ্টা করা হলেও সরকারিভাবে এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমান জানান, তিনি এখানকার গণকবর সম্পর্কে জেনেছেন। অতিসত্ত্বর এগুলো সংরক্ষণের জন্য জেলা পরিষদসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সংগে যোগাযোগ করবেন বলে তিনি জানান।