বরিশাল: আগামীকাল শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। দেশের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূলে আঘাত মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল আজ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ উপকূলের ১৮ জেলার সাড়ে ২১ লাখ মানুষকে লোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি সামান্য উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল বিকেল অথবা সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত, কক্সবাজার উপকূলকে ছয় নম্বর এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই মৃদু অথবা ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। উপকূলের এলাকাগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। গবাদিপশু ও দামি জিনিসপত্র ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন উপকূলবাসী। দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার উপকূল থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এ কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দরে তৃতীয় মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার উপকূলে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এদিকে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।