বরিশাল: বিএনপি নেতা ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের এক নারী আইনজীবী লিখিতভাবে এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের কপিটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গ্রহণ করেছে। যেখানে ওই আনজীবীর নমুনা স্বাক্ষরও রয়েছে। লিখিত অভিযোগের কপিটি সাংবাদিকদের হাতেও রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং চারবারের সংসদ সদস্য।
শারীরিক সম্পর্কের কুপ্রস্তাব ও নানাভাবে হেনস্তার কথা উল্লেখ করে লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগটি দায়ের করেন ওই নারী আইনজীবী। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট বার এনেক্স হল ভবনের ওই নারী আইনজীবী নিজের নাম পরিচয় উল্লেখ করে নিজের অভিযোগে বলেন, ২০১০ সালে বিএনপি আমলের আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের (রুম নং ১২৬ পুরাতন ভবনে) অধীনে সুপ্রিম কোর্ট বারে ৫/৬ মাস জুনিয়রশিপ করি। এসময় তিনি নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন। কিন্তু কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ে জুনিয়রশিপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই।
কিন্তু হঠাৎ শাহজাহান ওমরের স্ত্রী চেম্বারে এসে আমার ওপর আক্রমণ করেন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনার পর জুনিয়রশিপ ছেড়ে হল ভবনের ২১৬ নম্বর রুমে প্র্যাকটিস শুরু করি। এরপরও হয়রানি থামেনি বলে অভিযোগ নারী আইনজীবীর। শাহজাহান ওমর অন্য লোকজনদের দিয়েও কুপ্রস্তাব পাঠাতে থাকেন বলেও জানান তিনি।
অভিযোগকারী নারী আইনজীবী আরো জানান, এসব বন্ধ করার জন্য তার মোবাইলে কল দিলে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার্ড মোবাইল নম্বরে তিনি কথা বলবেন না। আন-রেজিস্টার্ড নম্বর থেকে কল দিতে বলেন। নতুন সিম কিনে কথা বলতে ও প্রস্তাবে রাজি হতেও বলেন তিনি। নোংরা এসএমএস, খুনের হুমকিসহ নানা বিষয়গুলো বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে জানালেও কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত ১৮ মে শাহজাহান ওমররের রুমে গেলে তিনি আবারো একইভাবে ওই নারী আইনজীবীকে গালিগালাজ করেন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এসময় এসি রুমের দরজা ভেঙে যায়।
ওই নারী বলেন, শাহজাহান ওমরের রুমমেট আমিনুর রহিম চন্দনের অনুপস্থিতিতে কক্ষে আমার সাথে এমন আচরণ করা হলেও উল্টো তিনি আমারই বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বারে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুধু তাই নয়, চন্দনের করা অভিযোগপত্রে শাহজাহান ওমরের স্বাক্ষর ও সমর্থনও নেই।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযোগকারী ওই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে আমি আইনজীবীর সদস্যপদ পাই। প্রথমে নিম্ন আদালতে কাজ শুরু করি। তবে ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অ্যান্ডরোলমেন্ট (সনদ) পাওয়ার পর থেকে আমি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করি। তার সঙ্গে কাজ করার শুরুর দিন থেকেই তিনি আমার প্রতি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতেন। তখন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর আমাকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাতে কোনো সায় না দেয়ায় তিনি (শাজাহান ওমর) বলেন- তোমাকে গাড়িতে ড্রাইভ দেই। এভাবে বার বার বলার পর একপর্যায়ে তার সঙ্গে গাড়িতে ঘুরতে বের হই। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমার মনের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।’
নারী আইনজীবী আরো বলেন, ‘আমি তার কোনো প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার বনানীর চেম্বারসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার অফার করেন। তাকে বোঝাই আমি একজন অবিবাহিত নারী, আমার পক্ষে আপনার কোনো প্রস্তাবেই রাজি হওয়া সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘আমার অজান্তে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের সঙ্গে কাজ করেন না তবে তার কক্ষে বসেন এমন একজন আইনজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে হাইকোর্ট বারের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। যদিও সেটা হওয়ার কথা ছিল আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমার অপরাধ কি তা জানানো সাপেক্ষে। কিন্তু তারা তা না করে আমাকে সদস্য পদ থেকে সাময়িক স্থগিত করেছেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহজাহান ওমর জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই নারীই বরং তার উপর আক্রমণ করেছে। জানালার কাচ ভেঙেছে। এমন অভিযোগ পেয়ে ওই নারী আইনজীবীর বারের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ক্ষুব্ধ ও আক্রোশবশত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যারিস্টার শাহজাহানের বিরুদ্ধে এক নারী আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। সেটা তদন্ত করার বিষয়ে আমাদের বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনসহ আমরা কার্যনির্বাহীর কমিটির সবাই আলোচনা করছি।’ অভিযোগের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
এদিকে জানা যায়, এই নারী আইনজীবী ঢাকা বারের কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধেও এর আগে একই অভিযোগ করেছিলেন।