বরিশাল: ভোলার চরফ্যাশনের আব্দুল জলিল নামে নাবালক এক শিশুকে ধর্ষণ মামলায় ‘ভুল আইনে’ বিচার করে বিশেষ আইনে দেয়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই আসামি অন্য কোনো মামলায় আটক না থাকলে জামিন দিয়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও রাষ্ট্রকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জলিলের করা জেল আপিল নিষ্পত্তি করে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের হাইকোর্টের একক বেঞ্চে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বুধবার (২৫ মে) প্রকাশের পর এ তথ্য জানা গেছে।’
আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আসামি আবদুল জলিলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ করাই যুক্তিযুক্ত। যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, ২০০১ সালে ১৩ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আবদুল জলিলকে ১৪ বছর জেলহাজতে আটক রেখে তার জীবনের যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা পূরণ হবে কীভাবে?
আসামি অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামিপক্ষ আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার পাওয়ার অধিকারী। এই মামলায় নাবালক শিশু আবদুল জলিলকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ক্ষতিপুরণ স্বরূপ রাষ্ট্রকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার জীবনের দুঃখ ঘোচাতে বলা হয়েছে।’
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ১৫ বছরের একটি শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভোলার চরফ্যাশন থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯-এর ১ ধারায় ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট আবদুল জলিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।’
ওই রায়ের বিরুদ্ধে দন্ডপ্রাপ্ত আবদুল জলিল জেল আপিল করেন। কিন্তু হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আপিল নিস্পত্তি করতে গিয়ে দেখেন, ঘটনার সময় জলিলের বয়স ছিল ১৫ বছর। মামলার চার্জশিটেও তা উল্লেখ ছিল। ফলে আদালত ওই সাজা বাতিল করে নাবালক হিসেবে জলিলের বিচার পুনরায় শিশু আদালতে করতে ভোলার জেলা দায়রা জজকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।’
এরপর ২০১০ সালে ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আবারো যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। এই দন্ডের বিরুদ্ধে আবার জেল আপিল করেন জলিল।
সেই আপিল নিস্পত্তি করে বিচাপতি আবদুর রহমান তার যাবজ্জীবনের সাজা বাতিল করে কারা মুক্তির নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ভোলা জেলা দায়রা জজ আদালত কর্তৃক জুবেনাইল কোর্ট গঠন করা সত্ত্বেও শিশু আইন এর বিধানের প্রতিপালন হয়নি। জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচার করে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ফলে জলিল বিচারের বদলে অবিচারের শিকার হয়েছে। তাই জলিলের দন্ডাদেশ বাতিল করা হল।
তবে জীবন থেকে ১৪ বছর পার হওয়ায় আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কতৃক আসামি আব্দুল জলিলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত। তাই আদালত আসামি আব্দুল জলিলের জীবনের ১৪টি বছরের বিনিময়ে রাষ্ট্রপক্ষকে দন্ডপ্রাাপ্ত জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার আদেশ প্রদান করছে।
যেহেতু দন্ডপ্রাাপ্ত আসামি আবদুল জলিলের দন্ডাদেশ বাতিল করা হল। সেহেতু অন্য কোন মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে আবদুল জলিলকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল।
এই মামলায় সংক্ষিপ্ত রায় আগে প্রকাশিত হলেও আবদুল জলিল এখনো মুক্তি পায়নি বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। যতদূর জানি জলিল এখনও কারামুক্তি পায়নি।’