বরিশাল: একের পর এক ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনায় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর এলাকার আশপাশের একাধিক জলদস্যু বাহিনী নিজেদের জীবন আর নিরাপদ রাখতে পারছে না। র্যাবের কৌশলী ফাদে পরে বেশ কয়েকটি বাহিনী প্রধান সহ নিহত হওয়ার ঘটনায় বনদস্যুদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবুও বেশ কয়েকটি বাহিনী এখনও বেপরোয়া। এমতাবস্থায় বরিশাল র্যাব বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করে।
কারন বনদস্যুদের একের পর এক বাহিনী বা উপদল সৃষ্টি হওয়ায় গোটা সুন্দরবন সহ তৎসংলগ্ন এলাকার জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় তাদের আকুতি আইন শৃংখলা বাহিনীকে জানিয়ে আসছিলো। অবশেষে বরিশাল র্যাব ৮ এর প্রধান লে. কর্নেল ফরিদুল আলম বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবে সায় দেয় দুর্ধর্ষ কাদের মাস্টার বাহিনী। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বাগেরহাটে সফরে গেলে বনদস্যুদের আত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। দুপুরে মাস্টার বাহিনীর প্রধান মোস্তফা শেখ ও তার ৯ সঙ্গী ৫২টি দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়ে তাদের অপরাধবোধ স্বীকার করেন।
এবং স্বাভাবিক জীবনের নিরাপত্তা চান। বনদস্যুদের আত্মসমার্পনের এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। র্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, জলদস্যুদের দমনে খুলনা ও বরিশাল র্যাব যৌথভাবে অভিযান অব্যাহত রাখে। তাদের সাথে যুক্ত থাকে কোস্টগার্ডও। তবে নৌ পথের আইন শৃংখলার দায়িত্বে থাকা কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে জলদস্যুদের সাথে সখ্যতার নানা অভিযোগ জেলেরাই উপস্থাপন করে আসছিলো। তাছাড়া কোস্টগার্ডের হাতে জলদস্যু আটক হয়েছে এ ধরনের নজির খুবই কম। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে সেনা কর্মকর্তা হিসেবে চৌকশ এবং তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন বরিশাল র্যাব ৮ এর পরিচালক বেশ কয়েক মাস ধরে জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিয়োগ করে একাধিক মাধ্যম।
কিন্তু জলদস্যুরা র্যাবের এই প্রস্তাবকে বিশ্বাস আনতে পারছিলো না। একপর্যায়ে র্যাবের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের আশ্বস্থ করেন। এর বুনিয়াদে প্রথম ধাপে কাদের মাস্টার বাহিনী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার তাগিদ অনুভব করে ওই প্রস্তাবে সায় দেয়। তাছাড়া র্যাব যেভাবে জাল বিছিয়েছে তাতে একের পর এক জলদস্যুদের জীবন ক্রসফায়ারের মুখে পরা ছাড়া আর কোন গতি নেই। সূত্র জানায়, সার্বিক বিবেচনায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে বনদস্যুদের একাধিক বাহিনী এখন আত্মসমপর্ণে মনস্থির করেছে। কাদের মাস্টার বাহিনী যার মূল নাম মোস্তফা শেখ আত্মসমর্পণে একটি আনুষ্ঠানিকতার আয়োজনে র্যাবের মধ্যস্থকারীদের প্রস্তাব দেয়। শর্ত হচ্ছে তাদের আটক করা যাবে না।
বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কাটাখালী এলাকার বাসিন্দা বাহিনী প্রধান কাদের মাস্টারের এই প্রস্তাবে র্যাবও আনুষ্ঠানিকতার একটি প্লাটফর্ম খুঁজছিলো। একটি সূত্রের ভাষ্য বছর দুই কামাল মাস্টারের ছোট ভাই কামরুল র্যাবের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হয়। সেই থেকেই তার বাহিনী বেপরোয়া হলেও মৃত্যু আতংক তাড়িত করে ফিরছিলো। তাদের ভয় ছিলো শুধু র্যাব। চলতি সপ্তাহে গত তিন দিন ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে সফরে আসলে বরিশাল ও খুলনা র্যাব এই দুইয়ের পরিচালক বনদস্যুদের আত্মসমার্পনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ পেয়ে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিষয়টি অবগত হয়ে এই আত্মসমপর্ণে আয়োজনে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন এবং গতকাল দিন নির্ধারন করে আইন শৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। মোংলা বিএফডিসির জেটিতে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বরিশাল র্যাব ৮ এর প্রধান আগেভাগেই সেখানে উপস্থিত হন। একে একে র্যাব ৬ এর অধিনায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার নিজামুল হক ও প্রশাসনের নানা কর্মকর্তারা যোগদেন অনুষ্ঠানে। বিকেল যখন তিনটা ঠিক তখন একটি ট্রলারযোগে মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার (৪৫) ও তার ৯ সঙ্গী মঞ্চে উঠে আত্মসমাপর্ণ করে। এ সময় ১৮টি একনলা বন্দুক, ৮টি দোনালা বন্দুক, ৬টি ২২ বোরের রিভলবর, ১টি থ্রিনটথ্রি রাইফেল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ৫টি রাইফেল, ২টি সিঙ্গেল রাইফেল, ৫টি শটগান, ২টি এয়ারগান ও আরো ২টি শটগান সহ ২২ হাজার রাউন্ড গুলি জমা দেয়।
দুর্ধর্ষ বনদস্যু বাহিনী এই আত্মসমর্পনে আসাদুজ্জমান কামাল তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার তাগিদকে ধন্যবাদ জানিয়ে অপরাপর বনদস্যুদের একই পথ ধরার আহবান রাখেন। স্থানীয় সূত্র গুলো জানায়, এ ধরনের বনদস্যুদের আত্মসমর্পনের অনুষ্ঠান এই প্রথম হওয়ায় অনেকের মধ্যে অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার তাগিদে সেখানে ভিড় জমায়। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বনদস্যুদের এই আত্মসমার্পনের পিছনে ভূমিকা রাখার বিশেষ করে বরিশাল র্যাব ৮ এর পরিচালক লে. কর্নেল ফরিদুল আলমকে ধন্যবাদ জানায়। সর্বশেষ খবরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কামাল মাস্টারের আত্মসমার্পনের পর অনেক বনদস্যু বাহিনী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রস্তাব বিবেচনায় এনে র্যাবের সাথে যোগাযোগের উদ্যোগ নিচ্ছে।