নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার প্রায় ৩ মাস পর নতুন মেয়র দায়িত্বে বসলেও অচলাবস্থা কাটেনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের। নয়া মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর নগর ভবনের কাজে কর্মে গতি আসলেও বন্ধ রয়েছে প্রায় সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া হতে হতে এখন গিয়ে ঠেকেছে ৩ মাসে। ক্যাজুয়াল এবং মাষ্টার রোলে কর্মরতদেরও একই অবস্থা। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিল পরিশোধসহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধ। ফলে পারিবারিক জীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে নগর ভবন কর্মীদের। এদিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর বিভিন্ন সড়কের দুরবস্থা দূর এবং জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্যে ৫৩ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণলয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন নতুন মেয়র। এই বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিগত বর্ষায় বরিশালে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সড়কগুলোর মেরামতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জুন মাসের প্রথম দিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর থেকেই মূলতঃ কর্মকান্ডে স্থবিরতা দেখা দেয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। নির্বাচনী ডামাডোল’র সাথে সাথে তৎকালীন মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলে অঘোষিত ভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েন তিনি। তার আদেশ নির্দেশ পালন থেকে শুরু করে বলতে গেলে সকল কর্মকান্ডে অবহেলিত হতে থাকেন তিনি। মূলতঃ তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নগর ভবনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। বন্ধ হয়ে যায় ঠিকাদারসহ অন্যান্য পাওনাদারদের বকেয়াসহ সব ধরনের অর্থ প্রদান। নতুন মেয়র কে আসবে কিংবা কোন কাজে তিনি খুশি বা অখুশি হবেন এই ভাবনায়-ই মূলতঃ কর্মকর্তা-কমচারীদের অসহযোগিতার শিকার হতে থাকেন কামাল। এরকম অবস্থার মধ্যে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পদোন্নতি পেয়ে ফেনী’র জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলী হয়ে যান নগর ভবনের তৎকালীন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) ওয়াহিদুজ্জামান। বিধান অনুযায়ী যে কোন বিল বা চেক পাশ হতে যৌথভাবে সিও এবং মেয়রের সাক্ষর থাকতে হয়, বিধায় সিও চলে যাওয়ার পর আরো বিপাকে পড়েন তৎকালীন মেয়র। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ মাসেও সিটি কর্পোরেশনে নতুন কোন সিও নিয়োগ না পাওয়ায় দেখা দেয় চরম স্থবিরতা।
এদিকে ৩১ জুলাইয়ের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারনে ২৩ অক্টোবরের আগে তার দায়িত্ব গ্রহণের কোন সুযোগ ছিলনা। ফলে অনেকটাই অভিভাবকহীনভাবে চলতে থাকে নগর ভবন। মাঝে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল মন্ত্রণালয় থেকে সিও’র স্থলে সচিব’র নামে অর্থনৈতিক ক্ষমতার অনুমোদন আনার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। উল্টো নগর ভবনের উন্নয়ন এবং রাজস্ব খাতের টাকা খামখেয়ালীভাবে খরচের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। চলমান এই পরিস্থিতিতে ৪ অক্টোবর মন্ত্রনালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন আহসান হাবিব কামাল। সেই সঙ্গে পুরোপুরি শূন্য হয়ে যায় মেয়রের পদ। এসব জটিলতায় বাকি পড়ে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২ মাসের বেতন। সেই সঙ্গে থমকে থাকে নিত্য দিনের প্রয়োজনীয়সহ কর্পোরেশনের অন্যান্য পাওনা পরিশোধ। ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথ অনুষ্ঠিত হয় নতুন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র।
২৩ অক্টোবর বরিশালে এসে মেয়রের দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। এসব প্রক্রিয়া চলার মধ্যে এখানে দায়িত্বে থাকা সচিব মোঃ ইসরাইল মিয়া’র বদলীরও গুঞ্জন উঠে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাকে এখান থেকে বদলী করা হয়নি। পূনরায় রাখা হয় সচিবের পদে। এতোকিছু এবং নতুর মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পরও প্রকারান্তরে স্থবিরই থাকে নগর ভবন। কারণ সিও পদে নতুন কাউকে নিয়োগ না দেয়া । কেননা মেয়রের একার স্বাক্ষরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার কোন বিধান সিটি কর্পোরেশনের নেই। নতুন সিও’র যোগদান কিংবা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নিদেনপক্ষে যদি সচিবকেও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পরিচালনার অংশিদার করা হয় কেবল তাহলেই বেতনসহ অন্যান্য বিল পরিশোধের ক্ষমতা পাবে নগর ভবন। এদিকে মাসের পর মাস ধরে চলমান এসব জটিলতায় বকেয়া বেতনের পরিমাণ গিয়ে দাড়ায় ৩ মাসে। এছাড়া অন্যান্য পাওনার পরিমানও দিন দিন বাড়তে থাকে।
সর্বশেষ পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, নগর ভবনের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মিলে বর্তমানে পাবে কম করে হলেও সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা।
এসব বিষয় নিয়ে আলাপকালে নয়া মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এটা ঠিক যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা চলছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে নগর ভবনের সেবামূলক কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে আগে দিনভর নগরীতে চলতো ময়লা অপসারনের কাজ। কিন্তু এখন আমরা ভোর ৫টার মধ্যে তা শেষ করছি। চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোও কিন্তু বন্ধ হয়নি। সড়ক সংস্কার এবং মেরামতের জন্যে সরকারের কাছে ৫৩ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছি আমরা। আশা করছি সেটিও পেয়ে যাব। তাছাড়া আমি দায়িত্বগ্রহণের পরপরই নগরীর উন্নয়নে ১২০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বকেয়া বেতন পরিশোধসহ সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড-ই আমরা সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে করতে পারবো ইনশাল্লাহ।’