সুন্দরবনে অপহৃত জেলেদের উদ্ধার অভিযানে বরিশাল র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাবের সাথে জলদস্যুদের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কিন্তু কোন জলদস্যু গ্রেফতারে সফলতার খবর পাওয়া যায়নি।
বরিশাল র্যাবের চৌকশ কর্মকর্তা উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান এ তথ্য এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় নিশ্চিত করেছে।’ তার ভাষ্য মতে, দুপুর ২ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সুন্দরবনের দুদমুখী সংলগ্ন একটি খালে র্যাব সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিলে জলদস্যু জাহাঙ্গিরবাহিনীর সদস্যদের মুখোমুখি হয়।
সেই সময় অভিযানের নেতৃত্বে দেয়া র্যাবের এই শীর্ষ কর্মকর্তা দস্যুদের আত্মসমার্পণের ইঙ্গিত দেন। কিন্তু এতে রাজি না হয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়ে তারা র্যাবকে লক্ষ্য করে এলোপাতারি গুলি ছোড়ে। প্রতিরক্ষায় র্যাব পাল্টা অবস্থান নিয়ে দস্যুদের কাবু করতে গুলি চালায়। আধাঘন্টা ব্যাপি গুলি বিনিময় হলেও কোন হতাহতের খবর নেই।
তবে র্যাবের তৎপরতায় শেষাবধি জাহাঙ্গিরবাহিনী পালিয়ে রক্ষা পায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি একনলা বন্ধুক, একটি কাটা রাইফেল, ১১ রাউন্ড কার্তুজ, একটি বান্ডুলিয়ারসহ বিপুল পরিমান দস্যুদের ক্যাম্প দ্রব্য সামগ্রী উদ্ধার করে। র্যাবের এই তৎপরতা স্থানীয় জেলেদের মনে সাহস জুগিয়েছে। যে কারণে র্যাবকে তারা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
এই উদ্ধার অভিযানে অপহৃত কোন জেলে উদ্ধার না হলেও বরিশাল র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। র্যাব-৮সহ খুলনা জোনের একাধিক টিম জেলেদের উদ্ধারে সুন্দরবনে নিয়োজিত রয়েছে। ফলে জিম্মি জেলেদের উদ্ধারে যে কোন সময় সফলতার খবর আসতে পারে। তাছাড়া বরিশাল র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা লে. কর্নেল ইফতেখার মাবুদও জোরালোভাবে জানিয়েছেন, অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ব্যাতিত সুন্দরবন থেকে ফেরা যাচ্ছে না।
সুতরাং যে কোন মুল্যে জিম্মি জেলেদের উদ্ধারের সফলতা এবং দস্যুদের বাগে নিয়ে আসার প্রাণপন চেষ্টা চলছে। সূত্রমতে, ঈদুল আযাহার পরপর সুন্দরবন এলাকা সংলগ্ন নদী থেকে ট্রলারসহ অন্তত ৪৭ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দস্যুরা। পরবর্তীতে সুন্দরবনের গহীনে একটি আস্তানায় আটকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে।
মূলত এই খবর মিডিয়ার কল্যাণে ছড়িয়ে পরার পরপরই শুরু হয় তোলপাড় অবস্থা। সেই সাথে জেলেদের উদ্ধারেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বরিশাল র্যাবের একাধিক টিম। এই টিমগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর আদনান কবির। মুলত মেজর আদনান কবির এর আগে সুন্দরবনে জেলেদের উদ্ধার অভিযানে গিয়ে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার সাহসী ভুমিকায় ভয়ানক বেশ কয়েকটি জলদস্যুবাহিনীকে আত্মসমাপর্ণনের সিদ্ধান্তে নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।
যে কারণে সম্প্রতি বরিশাল র্যাব সদরদপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করে। যদিও এই কর্মকর্তার বিশেষ ভূমিকায় এর আগেও একবার বাগেরহাটের মংলায় জলদস্যু আত্মসমার্পনের ঘটনা ঘটেছিল। এক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে সুন্দরবনে যে কয়টি বাহিনী সক্রিয় রয়েছে তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এমন সিদ্ধান্তে নিয়ে আসতে চাইছেন র্যাব কর্মকর্তা। আর এতে যদি ফলপ্রসূ না হয় তাহলে র্যাব সেখানে জেলেদের উদ্ধারে সর্বচ্চো শক্তি প্রয়োগ করবে। ফলে প্রাণবিয়োগের মত ঘটনা ঘটার বিষয়টিও অনুমেয়।
র্যাবের মেজর আদনান কবিরের অভিব্যক্তি হচ্ছে, আস্তে ধীরে জেলেদের উদ্ধারে কাজ চলছে। আজ এবং আগামীকাল শনিবার বড় ধরণের অভিযানের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কারণ জিম্মি জেলেদের অবস্থান সম্পর্কে ইতিমধ্যেই তারা নিশ্চিত হয়েছেন। সুতরাং অপহৃত জেলেদের উদ্ধার সফলতার খবর অভিসাম্ভি।