রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আরেক নেতা আলমগীর সরকার।

জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে আলমগীর সরকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

মনোনয়ন পাওয়া আলমগীরের বাড়িতে জেএমবির মিডিয়া সেল ছিল। যেখানে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন। ওই বাড়িতে একাধিক গোপন বৈঠক করেছে। যার ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে চমর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে তৎকালিন পুলিশ সুপার মাসুদ রানার নির্দেশে জেএমবির নেতাদের তার বাড়িতে বৈঠক করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করে আলমগীর সরকার বলেন, ‘আপ্যায়নের জন্য আমি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

গত ৭ মে বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর দুইদিন আগে ৫ মে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালান আবদুস সালাম। তবে সালামের বিরুদ্ধে জেএমবি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় তার মনোনয়ন বাতিল করে আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি ইস্যু করা হয়। দলের সভানেত্রীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিগুলো জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনি গ্রহণ করেছেন। তিনি জানান, ১৬ ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে আবদুস সালামের পরিবর্তে আলমগীর সরকার, হামিরকুৎসা ইউনিয়নে আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে ছাবিনুন নাহার ও যোগীপাড়া ইউনিয়নে সোহাগ হোসেনের পরিবর্তে মোস্তফা কামালকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাদের কাছে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য জেলার কাছে কোন তালিকা চাওয়া হয়নি। কেন্দ্র থেকে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আসাদ জানান, আলমগীর সরকারের বাড়িতে ২০০৪ সালে জেএমবি নেতাদের বৈঠক হতো তা সবাই জানে। তার ভিডিও চিত্র আছে। সে কারণে গতবার তার নাম পাঠানো হয়নি। তবে এবার তিনি কীভাবে দলীয় মনোনয়ন পেলেন তা জানা নেই বলে জানান আসাদুজ্জামান আসাদ।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ২০০৪ সালে আলমগীর সরকার ও তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর সরকার জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের বাড়িতে গোপন বৈঠক করে তালিকা তৈরি করা হতো। সে তালিকা অনুযায়ী জেএমবির সদস্যরা আওয়ামী লীগ কর্মীসহ এলাকার লোকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা আদায় করতো।

তিনি আরও বলেন, আলমগীর সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা কোনদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। তার বাবা জব্বার সরকার উপজেলা জাতিয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আলমগীরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মারা যাওয়ার পর আলমগীর উপজেলা জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তবে দলে আনুষ্ঠানিক যোগদান না করলেও ২০১২ সাল থেকে আলমগীর দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় এসে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।