বরিশাল: শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা মেতে উঠেছেন ভিন্ন ব্যবসায়। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি অকেজো ঘোষণা দিয়ে ডায়াগনস্টিকের দালালি করে থাকেন খোদ চিকিৎসকেরাই। এমনটাই অভিযোগ সেবা নিতে আসা রোগীদের। এক কথায় ডাক্তাররা শেবাচিমের চেম্বারে বসে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করতে। একই সাথে জোর পূর্বক বাধ্য করে থাকে তাদের নিজস্ব ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা করানোর জন্য।
দপদপিয়া থেকে আসা রুমি আক্তার বলেন, চোখের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে চেম্বারে বসার সাথে সাথেই চিকিৎসকরা তাদের নিজস্ব ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে এখন চলে যান, বিকালে চেম্বারে আইসেন। রুমির ভাষ্য মতে, চোখের পরীক্ষা করানোর কথা বললে বলে এখানের চোখের চিকিৎসার সকল মেশিন অকেজো। অথচ কয়েকমাস পূর্বে কোটি টাকা ব্যয় করে চোখের অপারেশনের জন্য লেসিক মেশিন স্থাপন করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
সরেজমিনে মেডিসিন বিভাগে দেখা গেল একই চিত্র। ডা: মুহাম্মদ রমজান আলীর চারপাশ ঘিরে বসে রয়েছে বেশ কয়েকজন যুবক। হাসপাতালে তাদের চেনে দালাল হিসেবে। এদের মধ্যের তিনজনের নাম হলো খোকন, কালাম ও মিলন ওরফে মুরগি মিলন। জানা গেছে, হাসপাতালের সামনের একটি ডায়াগনস্টিকের হয়ে রোগী ধরার কাজ করে এই খোকন, কালাম ও মিলন ওরফে মুরগী মিলন। গড়িয়ার পাড় থেকে ৩৫ বছর বয়সি রুবেল মিয়া সিরিয়াল ধরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন ডা: মুহাম্মাদ রমজান আলীর কাছে। ঢোকার মিনিটখানেকের মাঝে ডাক্তার রমজান তিনটি টেস্ট লিখে ফেলেন বলে জানায় রুবেল।

 

রুবেল ডা: মুহাম্মদ রমজানের বরাত দিয়ে বলেন, সে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেন আপনাকে একটি সিটি স্ক্যান দেব? আমি হ্যা বললে তিনি বলেন, সামনের বেবিলন ডায়াগনস্টিকে করিয়ে নিবেন। এটা আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। একই সাথে বলেন, বাকি যে রক্ত, মূত্র পরীক্ষা করাতে দিয়েছি তা পরীক্ষা কানোর জন্যও একটি নির্ধারিত ডায়াগনস্টিকের কথা বলে। ডাক্তার বলেন, এর বাইরে করাবেন না।
এ বক্তব্যের ভিত্তিতে ডা: মুহাম্মদ রমজান আলীর সাথে কথা বললে তিনি অবাক হয়ে বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে সিটি স্ক্যান হয় (!) আমি জানতাম না। একই সাথে বলেন, হাসপাতালের যেসব পরীক্ষা করা হয় তার মান ভালো না। একই সাথে জানায়, আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে প্রায় দশ দিন পরে রিপোর্ট দিয়ে থাকে।
তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডা: মুহাম্মাদ রমজান আলী দীর্ঘদিন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্টার ছিলেন। অথচ সাংবাদিকদের জানায়, হাসপাতালে যে পরীক্ষা হয় তা সে জানেই না। একই সাথে এই রমজান আলী নগরীর কয়েকটি ডায়াগনস্টিকে রোগী পাঠিয়ে থাকেন। এর মধ্যে হাসপাতালের সামনের কনিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম রয়েছে। শুধু রমজান আলী নয় একই দলে আছেন দুই ডজন ডাক্তারের বেশি। জানা গেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কেন্দ্রিক কয়েকটি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। যারা নগরীর বেশ কিছু প্রভাবশালী লোকের নাম দিয়ে চালানো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর দালালি করে থাকে। বেশ কয়েকজন ডাক্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের রোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না পাঠালে স্থানীয় রাজনীতি কর্মি, কতিপয় সাংবাদিক এবং ডায়াগনস্টিকের মালিকেরা বিপদে ফেলেন।
তবে এ অনুযোগের কথা বানোয়াট বলে দাবী করেছেন ডায়াগনস্টিকের কয়েকজন নেতা। তারা জানান, ডাক্তারদের পরিচালনায় অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলে থাকে। রমজান আলীর কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি নিজেই বেবিলন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর পরীক্ষা নিরিক্ষা করে থাকেন। সে কারনেই প্রকাশ্যে সেই প্রতিষ্ঠানে লোক পাঠিয়ে দেন।
এ ব্যপারে শেবাচিমের পরিচালক, ডা: সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে যারা রোগী ভাগিয়ে নেন তারা চিহ্নিত দালাল। আমি কয়েক দফায় চেষ্টা করেছি। কিন্তু এত বড় প্রতিষ্ঠানে সর্ম্পূন নিরোধ কারা সম্ভব নয়। ডাক্তারদের রোগী ভাগানোর প্রশ্নে বলেন, এরাও ঐ দালালদের সহযোগী। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। কিন্তু কাজগুলো তারা সর্তকতার সাথে করে থাকে।