বরিশাল: বরিশালের আলোচিত সন্ত্রাস কালাম মোল্লা ফের আরেকটি বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। এবার বরিশাল বিভাগীয় ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বরিশাল নগরীর বান্দরোডস্থ সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে কালাম মোল্লাসহ ৩ সন্ত্রাসীকে আটক করে। এই হামলার ঘটনা নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে কালাম মোল্লার সন্ত্রাসের আধিক্য নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। কারণ এর আগেও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায়ও কালাম মোল্লার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছিলেন বিভাগীয় নেতারা।’

সেই হামলার রেস কাটতে না কাটতেই ফের শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটলো এ হামলার ঘটনা। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বরিশাল জেলা  ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাবিদার কালাম মোল্লাসহ অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন একত্রিত হয়ে বিভাগীয় সংগঠনে ঢুকে সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাদের হামলায় সাধারণ সম্পাদক ইমান আলী শরিফ বাবুল, অফিস সচিব মাইনুল ইসলাম ও সদস্য মন্টু হাওলাদারসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এক্ষেত্রে বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে, হামলা চলাকালীন পুলিশের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে তাদের কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি।

বিভাগীয় নেতাদের অভিযোগ, কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইলিয়াসসহ অপরাপর পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই সন্ত্রাসী হামলার জন্ম দেন কালাম মোল্লা ও আয়নালসহ অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন। অবশ্য কালাম মোল্লাও হামলার দায় স্বীকার করে বলছেন, আগে তাদের লোকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বিভাগীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যে কারণে পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাবিদার কালাম মোল্লা তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কেডিসি এলাকায় একটি শাখা উদ্বোধন করেণ। অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে তারা একত্রিত হয়ে বান্দরোডস্থ বিভাগীয় সংগঠনের কার্যালয়ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। বিভাগীয় কমিটির সাধারণ-সম্পাদক ইমান আলী শরিফ বাবুল জানান. সন্ধ্যার পর কর্মীদের নিয়ে তিনি খোশগল্প করছিলেন। কিন্তু কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কালাম মোল্লা তার বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায়।

liton-mollha

এক পর্যায়ে সেই হামলায় তিনিসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক ৩ জনের মধ্যে পুলিশ ১ জনকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাত ৮ টার দিকে কোতয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, বশির আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে আটকের খবর। এই বশির কালাম মোল্লার সহযোগী। সে পোর্টরোড শাখার দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, ইমান আলী শরিফ বাবুলসহ অন্যান্যদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত বরিশাল তথা গোটা বিভাগে ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু বছর খানেক আগে ক্ষমতাসীন আ’লীগের নাম ভাঙিয়ে কালাম মোল্লা নিজেকে জেলার কমিটির সভাপতি দাবি করেণ। সেই সাথে গোটা জেলায় ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের নামে শাখা অফিস খুলে শুরু করেণ বেপরোয়া চাঁদাবাজি। তাদের সেই নীতিবিবর্জীত কাজে বিভাগীয় নেতারা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে দফায় দফায় হামলার শিকার হন।

পরিশেষে এই ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কালাম মোল্লা। মূলত সেই বিরোধীয় জেরেই শুক্রবার বিভাগীয় কার্যালয়ে হামলা ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, হামলা চালানোর পরপরই কালাম মোল্লা কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসায় চলে যান। অবশ্য কালাম মোল্লাও মুঠোফোনে এ কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, নেতাকে সার্বিক বিষয় জানানোর পর থানার দিকে রওয়ানা হয়েছেন। এই কালাম মোল্লা যুবলীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে হামলার শিকার ইমান আলী শরিফ বাবুলসহ তার সংগঠনের নেতাকর্মীরাও ক্ষমতাসীন আ’লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

এমতাবস্থায় কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ কোন কুলে ভূমিকা রাখবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদিও থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় ২ জন তাদের হেফাজতে রয়েছেন। এই ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। কিন্তু ক্যামেরায় ধারণকরা স্থিরচিত্রে দেখা গেছে হামলা চলাকালীন পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়টি।’