বার্তা পরিবেশক, অনলাইন:::ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আওতাধীন দত্তনগর কৃষি খামারের ৩ উপ-পরিচালকের ধান চুরির দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের। একের পর এক হয়রানিমূলক বদলি ও বরখাস্তকৃত উপ-পরিচালকদের ষড়যন্ত্রে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে বিএডিসি’র যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে প্রোগ্রাম বহির্ভূত প্রায় ৫ কোটি টাকার বীজ সংরক্ষণের তথ্য তিনি জানতে পেরে বিষয়টি চিঠিতে সদস্য পরিচালককে জানান। এই ধান মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের ৩ উপ-পরিচালক যথাক্রমে তপন সাহা, ইন্দ্রজিৎ শিল ও আক্তারুজ্জামান যশোরের উপ-পরিচালক আমিন উল্লার সহায়তায় মজুদ রাখেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে বিএডিসি’র হেড অফিস। তারা বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রমাণ পান। দুর্নীতি দমন কমিশনও অনুসন্ধান চালিয়ে চোরাই বীজ জব্দ করে।
এদিকে যশোরে থাকা অবস্থায় আব্দুল কাদেরকে মারধরসহ মোবাইলে চাঁদা দাবি করা হয়। এ নিয়ে তিনি যশোর কতোয়ালি মডেল থানায় জিডি ও একাধিক অভিযোগ দেন। বীজ চুরির তথ্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৯ সেপ্টেম্বর বিএডিসির সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা তার দপ্তরের ১৮৯৯ স্মারকের এক আদেশে আব্দুল কাদেরকে যশোর থেকে ঝিনাইদহে বদলি করেন। প্রায় দুই মাস হলো উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঝিনাইদহে বসবাস করছেন। অথচ দুই মাস যেতে না যেতেই আব্দুল কাদেরকে বিএডিসি’র ব্রাহ্মণবাড়িয়া দপ্তরে বদলির আদেশ হয়েছে। এই ঘন ঘন বদলির কারণে বিএডিসিতে সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল কাদের অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধান চুরির দায়ে বরখাস্তকৃত চার উপ-পরিচালকের একজন হচ্ছেন আমিন উল্লা। তার বাড়ি বিএডিসি’র ব্রাহ্মণবাড়িয়া দপ্তরের হবিগঞ্জ। নতুন আদেশে উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদেরকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দপ্তরের হবিগঞ্জ বদল করা হয়েছে। ফলে সেখানে পোস্টিং হলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কা করছে তার পরিবার।
উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল কাদের তার বদলির খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘন ঘন বদলির কারণে তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের গোকুলনগর ইউনিটের উপ-পরিচালক তপন কুমার সাহা, করিঞ্চা খামারের উপ-পরিচালক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র শীল, পাথিলা কৃষি খামারের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান তালুকদার এবং যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্লা কর্মসূচি বর্হিভুত একশ ২৯ দশমিক ২২ মেট্রিক টন এসএল ৮ এইচ হাইব্রিড ধান বীজ মজুদ করেন।
এ বীজের মধ্যে ৭৫ দশমিক ০৭৫ মেট্রিক টন গোকুলনগর খামার, ৩২ দশমিক ১১ মেট্রিক টন পাথিলা খামার ও ২২ দশমিক ০৩৫ মেট্রিক টন করিঞ্চা খামার থেকে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ও চালান ব্যতিরেকে যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে চুরি করে বিক্রির জন্য মজুদ রাখা হয়। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও প্রতারণার অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর উল্লেখিত ৪ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলছে।