বার্তা পরিবেশক,ত অনলাইন::: সখিনা বিবি। দুই নাবালক সন্তানসহ এক বছর আগে বাড়ি থেকে সখিনাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল স্বামী। এটা ছিল ভিটে হারানোর যন্ত্রণা। এরপর স্বামী পরিত্যক্তা সখিনা বিবিকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত সুভাষ রায়চৌধুরি। ভারতের নাগরিকত্ব আইন (এনআরসি) হওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন সখিনা বিবি। এবার কি সেই ঘরও কেড়ে নেবে সরকার?-এমনই আতঙ্কে রয়েছেন সখিনা বিবি। কেবল সখিনা নন-আতঙ্কে রয়েছেন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পুরোহিত সুভাষও। কারণ সুভাষের কোনও নথিপত্র নেই। আছে কেবল ভোটার ও আধার কার্ড। এদিকে, সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুমকি দিয়েছেন, আধার ও ভোটার কার্ড চলবে না।
ভারতে যখন বিভাজনের রাজনীতি চলছে তখনই মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার ব্রাহ্মণ সুভাষ রায়চৌধুরি সখিনাকে তাঁর ঘরে রাখেন। এ নিয়ে চোঁয়া গ্রামের একদল সুভাষের যজমানি বন্ধ করেছিল। তবে সুভাষ কখনও পিছু হটেননি। সব হুমকিকে উড়িয়ে সখিনাকে মেয়ে বলে আজও ঘরে রেখেছেন। জেলা ও ব্লক প্রশাসন সব সময় সুভাষের পাশে রয়েছে। কিন্তু নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়ার পর তাঁর মনে একটা অজানা ভয় দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, সুভাষ ১৩ বছর বয়সে তখন মা–বাবা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন। সেটা ১৯৭১ সাল। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে কিছুদিন থাকার পর সুভাষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন হরিহরপাড়ার চোঁয়া গ্রামে। নথি বলতে শুধু ভোটার আর আধার কার্ড। সুভাষের স্ত্রী ইলার বাড়িও চোঁয়া গ্রামেই।
সখিনার বাবার বাড়ি জলঙ্গিতে। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে বাবার বাড়ি তলিয়ে গেছে অনেক আগেই। বাবা মা-ও আর বেঁচে নেই। ফলে সখিনারও আধার ও ভোটার কার্ড ছাড়া অন্য কোনও নথিপত্র নেই। এসব দিয়ে কি নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া যাবে?-প্রশ্ন সখিনার।
সখিনা বলেন, ভয় তো লাগছেই। একবার স্বামী তাড়িয়ে দেওয়ায় ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে। নতুন বাবা মায়ের কাছে আনন্দে আছি। সেই ভিটেমাটিও কি ছাড়তে হবে? তবে যাই ঘটুক না কেন, আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমরা একসঙ্গেই থাকব।
এদিকে, সুভাষের মেয়ে কাকলিও বলেন, একসঙ্গে আছি, একসঙ্গেই থাকব। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো বলেছেন, কারও কোনও ভয় নেই। ফলে ভরসা কিছুটা আছে।
বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ সুভাষ রায়চৌধুরি বললেন, সেই কবে দেশ ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। কিন্তু এখন এটাই আমার দেশ। কেন ছাড়ব বলুন তো? কী আমাদের অন্যায়? ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। তবে সখিনা, তার দুই সন্তান আমাদের সঙ্গেই থাকবে। কাকলি যেমন আমার মেয়ে, সখিনাও আমার ছোট মেয়ে।