বরিশাল: আমতলীর কালিপুরা গ্রামের ১১ বছল বয়সী গৃহকর্মী জাহানারাকে ঢাকায় বসবাসরত কঙ্গো মিশন প্রবাসী মেজর শরীফ আল মারুফের স্ত্রী অনির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিত ওই গৃহকর্মী জাহানারাকে গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
পিতৃহীন এবং অভাবী জাহানারাকে ৪ মাস আগে কালিপুরা গ্রামের সোহরাব তালূকদারের স্ত্রী তাছলিম বেগম তার বোনের বাসা পটুয়াখালীতে মাসিক ৫শ’ টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। কিন্তু জাহানারাকে সেখানে কাজ না দিয়ে তার বোনের মেয়ে মেজর মারুফের স্ত্রী অনির ঢাকা ক্যান্টন মেন্টের বাসায় কাজ করতে দেয়।’

নির্যাতিত জাহানারার মা সাফিয়া বেগম বরিশালটাইমসকে জানান- অনির স্বামী মেজর মারুফ মিশন প্রবাসী। দিনের বেলায় গৃহকর্মী জাহানারাকে বাসার কাপর চোপর ধোয়া  এবং নাস্তা তৈরীসহ সংসারের নানা কাজ  করতে হত। এবং সন্ধ্যা থেকে রাত  ৩টা পর্যন্ত গৃহকত্রী অনির হাত পা টিপে দিতে হত।’

গত বুধবার সকালে  ঠিক সময়ে নাস্তা দিতে না পারায় গৃহকত্রী অনি জাহানারাকে মারধর করে এবং দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে আঘাত করে। কাজে সামান্য ক্রুটি বিচ্যুতির জন্য প্রায়ই এভাবে মারধর করত বলেও জানান তিনি।’

ঘটনার দিন রাত ১টার দিকে গৃহকত্রী অনি জাহানারাকে তার পা টিপে দিতে বলে। পা টিপে দিতে বিলম্ব হওয়ায় গৃহত্রী অনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে চর থাপ্পর লাথি মারে এক পর্যায়ে গ্যাসের চুলায় ক্ষুন্তি গরম করে জাহানারার বা হাতের কনুইর উপরে ছ্যাকা দিয়ে পুড়ে দেয়।’

এসময় জাহানারা ডাকচিৎকার দিলে অনি তাকে ঘরে  থাকা ভারী কাঠ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এভাবে ৫দিন ধরে বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর  জাহানারা বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে  রোববার বিকেলে তাকে পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন লঞ্চে তুলে দেয়।’

সোমবার সকালে গৃহকর্মী জাহানার পটুয়াখালী পৌঁছার পর  বেলা ১২টার দিকে অনির বাবার বাসা থেকে জাহানারার মা সাফিয়া বেগমকে মোবাইল ফোনে  তার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। মেয়েকে আনতে গিয়ে তার মেয়ের এ অবস্থা দেখে  মা সাফিয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পরেন।

হাসপাতাল বেডে মেয়ের পাশে বসে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন মোর মাইয়াডায় কি দোষ করছে। প্যাডের জালায় মাইনষের বাসায় কাম করতে গেছে হের লইগ্যা এমন মাইর মারতে অইবে। অগো বিচার যেন আল্লাহ করেন। এ কথাগুলো বলছিলেন আর বিলাপ করছিলেন।’

হাসপাতাল বেডে শুয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে  গৃহকর্মী জাহানারা জানায়, মেম সাব হারাদিন মোরে দিয়া কাম করাইত আবার রাইত অইলে হারা রাইত পাও টিপাইত। ঘুমাইয়া পড়লে আবার মাইর ধইর করত। কথাগুলো বলার সময় তার চোখ বেয়ে ছল ছল করে পানি পড়ছিল।

জাহানারার  ফুফু খোরশেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, জাহানারাকে পটুয়াখালীর মৃত্যু এ্যাডভোকেট হালিম মিয়ার বাসায়  কাজ দেওয়ার কথা বলে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায়। এসময় জাহানারার সাথে কাউকে কোন যোগাযোগ পর্যন্ত করতে  দেয়া হয়নি।’

এ নিয়ে  তাছলিমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান জাহানারা ভাল আছে এবং সে পটুয়াখালী আছে। তাছাড়া জাহানারাকে মাসিক ৫শ’ টাকা বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত চার মাসে ৫শ’টাকা দেওয়া হয়েছে আর কোন টাকা দেওয়া হয়নি।’

মেজরের স্ত্রী  অনি গৃহকর্মী জাহানারাকে মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ইচ্ছা করে আমি ওকে মারধর করিনি। আলমিরা খুলে টাকা চুরির অভিযোগে তরকারি রান্নার খুন্তি দিয়ে একটু আঘাত করি ও সেখানে ঘষা দিয়ে চামরা তুলে ফেলায় ওরকম হয়েছে।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাদল জানান, এবিষয়ে এখনো আমাদেও কাছে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’