২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মাঠে নেই বিএনপি, সরব আ’লীগ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:০৪ অপরাহ্ণ, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পটুয়াখালীর আট উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের চারটি আসন। দলীয় ভিত মজবুত হওয়ার কারণে বিগত সংসদ নির্বাচনে চারটি আসনই আওয়ামী লীগ দখলে রাখে। এর আগে ১৯৯১ সালে একটি এবং ২০০১ সালে দুটি আসন বিএনপির দখলে যায়। এ জেলায় দুই বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ঘিরে চলছে মূল প্রচারণা।এরপরও আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, আর বিএনপির মধ্যে চলছে প্রকাশ্য বিরোধ। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা থাকলেও মাঠে পদচারণা কম বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের।

অতীতের চেয়ে আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেশি হলেও শক্ত প্রার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে এখন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেমন পোস্টার ও ব্যানার সাটাচ্ছেন। তেমনি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নামে বেনামে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। তবে কিছু কিছু নেতাকর্মী সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কিছুটা বিব্রত ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

পটুয়াখালী-১ (সদর, দুমকি ও মির্জাগঞ্জ)

সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সমর্থন দিয়ে তার (রুহুল আমিনের) বিজয় নিশ্চিত করেন।

দলের জন্য তার এই ত্যাগ ও অবদানকে অবশ্য মোটা দাগে স্বীকার করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে শাহজাহান মিয়ার ছেলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনিও আছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায়। তবে দলে রয়েছে বিরোধ। আটঘাট বেঁধে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট মোঃ আফজাল হোসেন, সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মোঃ সুলতান আহমেদ মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র ডা. মো. শফিকুল ইসলাম, দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার ।

এখানে বিএনপিতেও বিরোধ চরমে। এবার বিএনপি সমর্থিত জোটের মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি, বিএনপি নেতা মোশতাক আহমেদ পিনু। জাতীয় পার্টি থেকে দলের মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার রয়েছেন একক প্রার্থী হিসেবে। এছাড়াও জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আবদুর রহমান (শাহ আলম) সম্ভাব্য প্রার্থী।

পটুয়াখালী-২ (বাউফল)

এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করতে পারেনি। এই আসনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ। এছাড়া এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন শিল্পপতি এসএস ফিরোজ আলম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল।

এই আসনে বিএনপি জোটের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি মোঃ শহিদুল আলম তালুকদার, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদার, স্বেচ্ছসেবক দলের নেতা মোঃ মুনির হোসেন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা)

এই আসন জেলার ৪টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই আসনে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন কথিত সংস্কারপন্থি হওয়ায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন এবং সেখানে প্রায় অচেনা নতুন মুখ গোলাম মাওলা রনিকে এনে মনোনয়ন দিলেও এলাকাবাসী তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারে সবার আগে মাঠে নেমেছেন আখম জাহাঙ্গীর।

এছাড়া আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব কাজী আলমগীর, গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, দশমিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আঃ আজিজ, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এস.এম ফজলুল হক, গলাচিপার পৌর মেয়র হাজী ওহাব খলিফা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কামরান শহীদ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আরিফুর রহমান টিটো।

এই আসনে বিএনপি সমর্থিত জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- সাবেক এমপি মোঃ শাহাজাহান খান, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ শাহআলম, শিল্পপতি মোঃ গোলাম মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন, এডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী)

কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুবিধাজনক। বিগত ৫টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এই আসনে বিজয়ী হন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন তিনবার নির্বাচিত এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুবুর রহমান, আমেরিকা প্রবাসী আওয়ামী লীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ইসলাম লিটন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ ওসমানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোতালেব তালুকদার, যুবলীগ নেতা অধ্যক্ষ মহিববুর রহমান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম সোহাগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আলম টিটো ও টিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান কোক্কা।

বিএনপি জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবিএম মোশারেফ হোসেন, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোঃ মনিরুজ্জামান মনির ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গাজী গোলাম সরোয়ার। এছাড়াও এখানে ইসলামী আন্দোলনে প্রার্থী হতে পারেন মুফতি হাবিবুর রহমান।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন