বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে বরিশালে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দিনটিকে ঘিরে সারা দেশের মত বরিশাল নগরীসহ বিভাগের জেলা ও উপজেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা।
রায় ঘিরে নাশকতা শংকায় ইতিমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই চিঠিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক করণীয় কী- সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করার, তা আমরা করবো। কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি।
এমতাবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে- মহানগরীসহ বরিশাল জেলায় কয়েকস্তরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে ৮ ফেব্র“য়ারি ক্ষমতাসীনদের নেতাকর্মী, সমর্থক ও উৎসুক জনতার দখলে থাকবে বরিশালের রাজপথ। এছাড়া রায়ের আগে ও পরে উদ্ভুদ্ব পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল বুধবার থেকেই বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
এদিকে ওই দিন দুর্নীতি মামলার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে দলটির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক’ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করার চেষ্টার কথা জানিয়েছে বরিশাল বিএনপি। তবে কর্মসূচি কতটা পালন করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপির কয়েকজন তৃনমূল নেতা।
গত সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আলম রাজু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়- হিজলাসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, রায়ের আগে কর্মসূচি নিয়ে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। রায় নেতিবাচক হলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মিলে কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
এই নেতা অভিযোগ করেন- কোন কর্মসূচি ঘোষণার আগেই বরিশালে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতংকে অনেক নেতাকর্মী ঘরছাড়া।
বরিশাল জেলা বিএনপির আরেক নেতা বলেন- গত শনিবার প্রথম জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর বরিশাল বিএনপির অভিভাবক যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও ফেরেননি। রায় ঘোষণার আগে তারা ফিরবেন কিনা তাও অনিশ্চিত।
এছাড়া ছাত্রদল-যুবদলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাও বরিশালের বাইরে রয়েছেন। এ অবস্থায় রায় ঘোষণার দিন দলীয় কার্যালয় বা সড়কে অবস্থান নেওয়া চেষ্টা করা হবে। তবে সবকিছুই হবে শন্তিপূর্ণভাবে।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কোন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাথা ঠান্ডা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকার বা পুলিশের পাতা কোনো ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির আরেক নেতা জানান, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে তাতে রায়ের দিন রাজপথে কিংবা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিতে পারবো কিনা তা নিয়েই সন্দিহান আমরা।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারসহ বরিশালের কেন্দ্রীয় বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে রায় ঘোষণার দিন সকাল থেকেই মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
আওমীয় লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক ও জনতার ঢল নামবে মহানগরীতে। দুপুরের আগেই জনসভা স্থল রুপ নেমে জন সমুদ্রে। তাই তাদের নিরাপত্তায় ও জানমাল রক্ষায় সকাল থেকেই মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
বরিশালে অবস্থান করা সাবেক এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক গত মঙ্গলবার (০৬ ফেব্র“য়ারি) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কেউ যদি গণতান্ত্রিক ধারা ব্যহত করতে চায়, কেউ যদি পুলিশের ওপর হামলা করে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, সরকারী সম্পদের ক্ষতি সাধন করতে চায়, তাহলে সেই অপশক্তিকে সেই দুস্কৃতকারীদের পাকড়াও করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা রাজনৈতিক এবং নাগরিক দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন- রায় নিয়ে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কিংবা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটালে সেটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিহত করবে। জনগণের জানমাল এবং সরকারের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপি যেভাবে আস্ফালন করছে, মারবো, ধরবো, পেটাবো বলছে- এটা আমরা বরদাশত করবো না। আমরা রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করবো। রায় রায়ের মতো হবে, বিচার বিচারের মতো হবে। এজন্য কারও কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর বরিশালের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি রায়কে ঘিরে কোনো অপতৎরতার চেষ্টা চালালে তা বরদাস্ত করা হবে না। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির সুযোগও দেওয়া হবে না কাউকে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এসএম রুহুল আমিন বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলসহ পুরো বরিশালেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাস, হোটেল ও বাড়িতে অতিথি পরিচয়ে বহিরাগতদের উপস্থিতি নজরদারিতে আনছে প্রশাসন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সার্কিট হাউজকে ঘিরে বরিশালে ৫ সেক্টরে ১ হাজার ৬৮ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রতিটি মানুষকে নিরাপত্তা গেটের (আর্চওয়ে) মধ্য দিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করতে হবে।
এছাড়াও বরিশাল শহর ও শহরতলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হবে চেকপোস্ট। নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যান চলাচলে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বরিশাল জেলা পুলিশের সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বরিশালে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে গোটা বরিশালজুড়েই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বাইরের জেলা থেকেও পুলিশের সদস্যদের আনা হচ্ছে। কোনো ধরনের আশঙ্কা আমাদের নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বরিশাল সফর ও জনসভা সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হবে। রায়কে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা গোটা বরিশালে ঘটতে দেওয়া হবে না।’
শিরোনামOther