একুশ বাঙালির অহঙ্কার, জাতীয় চেতনা। এ চেতনা ধারণ করেই এগিয়ে যায় তারুণ্য, এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ধনী-গরিবের ব্যবধান থাকলেও চেতনা আছে সবার মাঝেই- সেটিই প্রমাণিত হয়েছে বরিশাল শহরের বর্ধিত অংশ খ্যাত কীর্তনখোলা নদীর চরে গড়ে ওঠা রসুলপুর কলোনীতে।
বস্তির ৫ শতাধিক পরিবার গত ৬ বছর ধরে অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে একটু ব্যতিক্রমভাবে।
এ বস্তির শিশুরা প্রতিবছরই অভিভাবকদের প্রেরণায় জোটবদ্ধ হয়ে তৈরি করে আসছে ছোট-বড় বহু শহীদ মিনার। যার প্রস্তুতি এ বছরও শুরু হয়েছে। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বস্তির শিশু শিক্ষার্থীরা ৩০টির বেশি শহীদ মিনার তৈরির কাজ করছে। সেগুলোর বেশিরভাগই ঘরের সামনে, নয়তো খোলা মাঠে ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
আবার কাঠ-বাঁশ দিয়েও তৈরি করা হচ্ছে কয়েকটি শহীদ মিনার।
শহীদ মিনারকে রঙিন করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাহারি রঙের কাগজ, রং, কাঠের গুঁড়ো, সুতা ও ককশিটসহ নানা জিনিসপত্র।
ওই কলোনীর বাসিন্দা ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনি বলছে, ‘আমি আর আমার ভাই মিলে শহীদ মিনার তৈরি করছি। এখানে মাটি ও ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বাবা রঙ কিনে দিয়েছেন আর মায়ের কাছ থেকে চুলোর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কাঠের গুঁড়ো নিয়েছি’।
লাল আর সবুজ রঙের সঙ্গে কাঠের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হবে লাল-সবুজের বাংলার শহীদ মিনার। একুশের সকালে এ শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো’।
একইভাবে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিক, মুনিম, ৫ম শ্রেণির রাতুল, দ্বিতীয় শ্রেণির মোনালিসা, ৬ষ্ঠ শ্রেণির রাকিব, ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্নাসহ অনেকেই শহীদ মিনার তৈরি করছে। সকাল থেকে শিশুদের মাঝে প্রতিযোগিতার আবহও সৃষ্টি হয়েছে। বাবা-মায়েরাও জুগিয়ে যাচ্ছেন উৎসাহ।
পল্লীর বাসিন্দা সমাজসেবী কহিনুর বেগম বরিশালটাইমসকে বলেন, ৬ বছর আগে এ শহীদ মিনার তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যা প্রথম বছর সংখ্যায় ছিলো ১৬টি আর গত বছর ছিলো ২৫টি। আর এবার হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০টি। পরিবার কিংবা বন্ধুমহল মিলে শহীদ মিনার তৈরি হলেও নেতৃত্বে থাকে পরিবারের শিশু সন্তানরা। এসব শিশুরা আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়াশোনা করে।
কলোনীর ভেতরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেটিতে নেই কোনো শহীদ মিনার। তারপরও এখানকার খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ জাতিসত্ত্বাকে ভুলে যাননি। তারা বাংলাদেশ আর বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেই এ আয়োজন করে থাকেন। শিশুদের প্রেরণা দিয়ে তাদের মাধ্যমেই যে যেভাবে পারেন, যা দিয়ে পারেন শহীদ মিনার তৈরি করে আসছেন বস্তির বাসিন্দারা। আর হাতে গড়া এসব শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে স্মরণ করছেন ভাষা শহীদদের, চেতনায় শাণিত হচ্ছেন নতুন করে।
এদিকে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রসুলপুর বস্তিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের আয়োজনে দিনভর রয়েছে নানা কর্মসূচি। যার মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টায় মেডিকেল ক্যাম্প এবং বেলা ১১টা থেকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শহীদ মিনার তৈরির প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার ও শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা-কলম বিতরণ।
এছাড়া ওই কলোনী শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে একটি একটি পাঠাগার করা হয়েছে, যেটি ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্বোধন করবেন তার মেয়ে শাওন মাহমুদ।
শিরোনামOther