বিশেষ বার্তা পরিবেশক:: চলমান বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে অর্থাৎ ১৮০ দিনে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬০১ জন নারী ও শিশু। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৪৬২ জন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩৪ জন। ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৪০ জনের বয়স ৬ বছর এবং ১০৩ জনের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। এছাড়া ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেন ৭ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ১২৬ জন নারীর ওপর। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চলতি বছরের ৬ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বুধবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করে। বরিশাল।টাইমস।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১০৩ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৯জন নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন নারী এবং আটজন পুরুষ নিহত হয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গত ৬ মাসে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহপরিচারিকা নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ছুটি ঘোষণার পরও দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার সংবাদ প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হতে থাকে।

এদিকে চলতি বছরে এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২৫৩ জন নারী। এর মধ্যে স্বামী ও তার পরিবারের দ্বার হত্যার শিকার হয়েছে ১৬৩ জন নারী। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪০ নারী। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে এপ্রিল মাসে ৩৪ জন এবং মে মাসে ৫৫ জন নির্যাতনের শিকার হন। জুন মাসে ৭০ জন নারী নির্যাতনের শিকার হন যার মধ্যে ২১ জন স্বামী দ্বারা, ৯ জন পরিবারের সদস্য দ্বারা এবং ১০ জন নিজ পরিবারের সদস্য দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছেন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৯৪ জন নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪২ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জনকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৫ জন নারী। এ ছাড়া স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ৪ নারী। এ সময়ের মধ্যে ২২ জন গৃহপরিচারিকা বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং নিহত হয়েছেন ৪ জন। ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৪ জন। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১২ জন নারী।

বছরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্নস্থানে শিশুদের হত্যা এবং নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। গত ৬ মাসের এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও অত্যন্ত হতাশাজনক। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের নানা নৃসংশ ঘটনা ঘটে। এ ৬ মাসে ৬৮০ শিশু নানা সহিংসতার ও ২৯৭ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ৩৯৯টি ধর্ষণ ও ৯টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময়ের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৮টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পুজামন্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৭ জন। এ ছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১টি বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ২২ জন যার মধ্যে ঢাকাতে সর্বোচ্চ ৮ জন মারা গেছেন।

৬ মাসে সীমান্তে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। এর মধ্যে ২১ জন গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতনে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৫ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন।’