মোঃ জসীম উদ্দিন, বাউফল:: পটুয়াখালীর বাউফলে এডিপি প্রকল্পের কাজের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তা নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী। প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই উত্তোলন করা হয়েছে সমুদয় বরাদ্দকৃত অর্থ ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় (এডিপি) উপজেলায় ৩৪টি প্যাকেজ প্রকল্পের মধ্যে ১১ নম্বর গ্রুপের প্যাকেজের বাউফল সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিলবিলাস গ্রামের মোবারক মোল্লা বাড়ির পশ্চিম পাশের সোলিং রাস্তা থেকে রাজা বাড়ি অভিমুখে একটি মাটির রাস্তায় সোলিং করা হয়। মেসার্স মদিনা এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওই কাজটি করেন।

গত ২০ জুন শত ভাগ কাজ দেখিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৩০ জুন বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ নির্মাণের পর মাস যেতে না যেতেই ওই সোলিং রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। রাস্তাটি কাদামাটির সাথে মিলে গিয়েছে। অতি নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তাটি সোলিং করায় রাস্তাটির বেহাল দশা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এডিপি প্রকল্পের ওই একই প্যাকেজে সদর ইউনিয়নের গোশিংগা গ্রামের সুমনের বাড়ির সামনে একটি টিউবওয়েল, বাউফল হাসপাতালে একটি হোন্ডা জেনারেটর ও বাউফল আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন মেরামত কাজেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরিব ও দুস্থ্য পরিবারের জন্য সুমনের বাড়ির সামনে টিউবওয়েলটি বসানোর কথা থাকলেও তা বসানো হয়েছে সুমনের ঘরের পিছনে। তার বাড়ির সামনে আগ থেকেই একটি টিউবওয়েল রয়েছে। বাউফল হাসপাতালে হোন্ডা জেনারেটরের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে অন্য ব্রান্ডের একটি জেনারেটর।

এছাড়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বাস ভবনটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারি প্রধান শিক্ষক ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে মেরামত করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ ওই বাস ভবনটি মেরামত দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।

সহকারি প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ বরিশালটাইমসকে জানান, তিনি ব্যক্তিগত খরচে প্রধান শিক্ষকের বাসভবনটি মেরামত করেছেন। একদিন লিংকন নামের এক ব্যক্তি তার বাসায় এসে মেরামত বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বললেও তা এখনও পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

কালিশুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমার সরদারের বাড়ি সামনে আয়রন ব্রিজটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে মেরামত করা হলেও এডিপি প্রকল্পের আওতায় নতুন করে প্রকল্প দেখিয়ে ইজি এন্টার প্রাইজের নামে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। অথচ এই বরাদ্দ দিয়ে ব্রিজের কোন মেরামত কাজ করা হয়নি।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপির) আওতায় গত ৩০ জুনের মধ্যে (১৯-২০ অর্থ বছর) ওই সব প্রকল্পের প্যাকেজের কাজগুলো শেষ করে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করার কথা। কোনো ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ওই প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকার বরাদ্দ ফেরৎ পাঠানোর কথা। অথচ ১০ নম্বর গ্রুপের একটি প্যাকেজে মদনপুর ইউনিয়নের দ্বিপাশা গ্রামের নুর হোসেন হাওলাদার বাড়ির সামনে মসজিদের পুকুরের ঘাটলা নির্মাণের কাজ এখনও চলছে। খুবই নাজুকভাবে কাজটি করা হচ্ছে। এভাবে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারকে বিল দেয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সুলতান হোসেন বরিশালটাইমসকে জানান, ‘পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিশেষ জামানত রাখা হয়েছে। কাজ শেষ হলে তাদেরকে বিল পরিশোধ করা হবে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ জামানত রেখে জুন বান্ডিংসের কাজ করানো যায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি এ বিশেষ জামানত রাখা হয়েছে।’ তবে তিনি লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত দেখাতে পারেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বরিশালটাইমসকে জানান, ‘বিশেষ জামানত রেখে কাজ কারার কোনো বিধান নেই। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে বিধি অনুযায়ি টাকা ফেরৎ পাঠানোর কথা।’ তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।