নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল শহরের কাটপট্টি রোডে আবাসিক পুর্ণিমা হোটেলে রেখে এনজিওকর্মী এক তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ করে রায়হান সিকদার নামের যুবক। চাঁদপুরে হাইমচর থানার বাসিন্দা পঁচিশোর্ধ্ব তরুণীর সাথে প্রেম সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বরিশালে ডেকে আনে বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া গ্রামের মৃত আনসার আলী সিকদারের ছেলে। পরে বরিশাল নগরীর ওই হোটেলে তরুণী সাথে রাতযাপন শেষে বিয়ের কথা বলে বেড়িয়ে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখে যুবক রায়হান। উপায়ান্ত না পেয়ে তরুণী প্রেমিক যুবকের বাকেরগঞ্জের বাড়িতে যায় এবং বিয়ের দাবি রাখলে তাকে রায়হানের স্বজনেরা মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। গত ৩১ জুলাই রাতের ওই ধর্ষণের ঘটনায় তরুণী বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা নেই, নিচ্ছি বলে কালবিলম্ব করছে, অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তথ্য বরিশালের একজন আইনজীবী বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। মুলত তরুণী ওই আইনজীবীর পরামর্শেই অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আইনজীবী ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করার সুবাদে বছর দুয়েক পুর্বে চাঁদপুরের তরুণীর সাথে বাকেরগঞ্জের যুবক রায়হানের হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক তৈরি হয়। এবং পরবর্তীতে ত্রিশোর্ধ্ব যুবক রায়হানের সাথে সম্পর্কের খাতিরে তার পরিবারের সদস্যদের সাথেও তরুণীর পরিচয় ঘটে। এর পরে তরুণী রাজধানীর সেই গার্মেন্টেস ছেড়ে একটি এনজিওতে চাকরি নেন। ওই সময় যুবক রায়হান প্রেমিকা তরুণীর কাছ থেকে একাধিকবার নানান অজুহাতে তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। এসময় যুবক তরুণীকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় এবং এই বিষয়টি তরুণী রায়হানের মা শারমিন আক্তারকে অবহিত করলে তিনিও সম্মতি দেন।

সূত্রটি আরও জানায়, তরুণীকে গত ৩০ জুলাই বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে বরিশালে আসার প্রস্তাব দেয় যুবক রায়হান। একদিন পরে তিনি সড়কপথে বরিশালের নতুল্লাবাদ আসলে তাকে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে রাত ৯টার দিকে কাটপট্টি রোডের আবাসিক হোটেল পুর্ণিমায় নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের তৃতীয় তলার ১০ নম্বর রুমে রেখে তরুণীকে রাতভব ধর্ষণ করে যুবক। এসময় তরুণীকে একদিন বাদে অর্থাৎ ১ আগস্ট (শনিবার) বিয়ে করবে বলে জানায়।

ওই সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তরুণীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে প্রেমিক রায়হান তাদের বাড়ি বাকেরগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এবং সেখানেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু হোটেল থেকে নামার পরে গাড়ি আনার কথা বলে যুবক তরুণীকে রাস্তায় রেখে পালিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত সেলফোনটি বন্ধ করে রাখে। উপায়ান্ত না পেয়ে তরুণী নিজেই যুবক রায়হানের বাড়ি বাকেরগঞ্জে ছুটে যায় এবং পুরো ঘটনা প্রেমিকের স্বজনদের কাছে খুলে বলে। পাশাপাশি বিয়ের আর্জি রাখেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যুবকের মা শারমিন আক্তার, মেয়ে এ্যানি সিকদার, তানজিলা আক্তার মনি, স্বজন রফিকুল সিকদার ও সোহেল সিকদার তাকে মারধর করে।

বিয়ের প্রলোভনে আবাসিক হোটেলে রেখে রাতভর ধর্ষণ ও স্বজনদের মারধরের পুরো ঘটনা শহরের এই আইনজীবীর পরামর্শে বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের কাছে বুধবার বিকেলে তুলে ধরে তরুণী। এবং একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগটি থানা পুলিশের ওসি হাতে পেলেও মামলা গ্রহণ ও আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করে আসছেন। ওই আইনজীবী এমন অভিযোগ করেন।

এই বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে কালবিলম্বের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এবং অভিযুক্তদেরও আইনের আওতায় আনার কথা জানান ওসি।’