শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: সংগঠন থেকে বহিস্কারের খবরে বিমর্ষ শারমিন মৌসুমি কেকা এখন কিছুটা হলেও উৎফুল্ল। ঢাকায় পৌঁছে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আমির হোসেন আমুর সাথে সাক্ষাৎ করে গ্রীণ সিগন্যাল পাওয়ায় ঝালকাঠির এই নেত্রী আশ্বস্ত হয়েছেন, আপাতত তিনি বহিস্কার হচ্ছেন না। জেলা আওয়ামী লীগের বৈঠক শেষে কেকাকে বহিস্কারের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে, এ ধরনের খবর চাউর হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি প্রচার বলে মঙ্গলবার গভীর রাতে কেকা তার ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাসে মিথ্যা বলে দাবি করেন। পাশাপাশি নেতা তার অনুকূলে রয়েছেন বলে আভাস দেন। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কেকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ঘটতে যাচ্ছে তা এখন চরম আলোচনায় রুপ নিয়েছে। প্রকৃত অর্থে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার কর্ণধর আমির হোসেন আমুর কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সেই অপেক্ষায় ঝালকাঠির ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে একধরনের গোলকধাধার সৃষ্টি হয়েছে, ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে। একারণেই যে কেয়ার বিদ্রোহীরা যেকোনো মূল্যে এই নেত্রীর বহিস্কারের যে দাবি তুলেছে তাতে অনড় অবস্থানে থেকে তারাও পাল্টা নেতাকে বুঝাতে চাচ্ছেন এই দাবির যৌক্তিকতা কতুটুকু।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত রোববার সন্ধায় প্রধানমন্ত্রী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী প্রস্তুতির এজেন্ডা নিয়ে ঝালকাঠি জেলা আ’লীগের বৈঠকের পরেই জেলার রাজনীতির রুপচিত্র পাল্টে যায়। দলীয় সূত্র জানায়, অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শারমিন মৌসুমি কেকার প্রসঙ্গটি হঠাৎ করে উত্থাপিত হয়। এসময় বেশ কয়েকজন নেতা জোটবদ্ধভাবে এই নেত্রীকে সংগঠন থেকে বহিস্কারে দাবি তুলে রেজুলেশন তৈরি করে হাইকমান্ডের এর সিদ্ধান্তের জন্য ঢাকায় পাঠানোর অনুরোধ রাখ হয়। সে ক্ষেত্রে বহিস্কারের কারণ তরান্বিত করতে সম্প্রতি সুগন্ধা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহিদ মীনার ভেঙে সেখানে স্টল নির্মাণ এবং একজন বিএনপি নেতার স্ত্রীকে অপহরণ করে চুলকেটে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় সংগঠনকে বিতর্কের মধ্যে ফেলার অভিযোগ তোলা হয়। এ সময় কেকা উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো প্রতিবাদ না করে বিস্ময় প্রকাশ করেন বলে জানা যায়। এরপরই প্রচার পায় ওই বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদক কেকাকে বহিস্কার করা হয়েছে। এ খবর বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ায় শুধু ঝালকাঠি নয়, বিভাগীয় শহর বরিশালেও তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করে।

সাংগঠনিক এই পদক্ষেপ সত্য কিনা তা নিশ্চিত হতে ওই বৈঠকে সভাপতিত্বকারী জেলা আ’লীগের সভাপতি শাহ আলম সরদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এধরনের আভাস দেন। তখনই ধারণা করা হয়েছিলো, সম্ভবত জেলার ভাগ্যবিধাতা আমির হোসেন আমুর কোনো সিগন্যাল রয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, ঝালকাটি জেলা আ’লীগের সর্ব সিদ্ধান্ত তার ইশারা বিহীন সম্ভব নয়। পরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই বৈঠকে জেলার সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির অনুপস্থিত ছিলেন ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায়। যে কারণে দলীয় কাউকে বহিস্কার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর না থাকলে রেজুলেশন তৈরির অবকাশ থাকেনা। তাছাড়া জেলা কমিটি কাউকে সরাসরি বহিস্কারের ক্ষমতা রাখেনা হাইকমান্ডের অনুমতি বিহীন । ফলে কেকাকে বহিস্কার করা না হলেও যে দাবি তোলা হয়েছে তা বাস্তবায়নে বিদ্রোহীরা স্বউদ্যোগে হাইকমান্ডে এই নালিশ পৌঁছে দিতে পারে। তা সম্ভব হলে কেকার ভাগ্যের সিঁকে ছিড়ে পরার সম্ভবনাই শতভাগ।

তাছাড়া এই নেত্রীকে বহিস্কারের দাবি তোলার ক্ষেত্রে কয়েকজনের ভূমিকা প্রকাশ্যে থাকলেও নেপথ্যে একাধিক নেতার সমর্থন রয়েছে, এধরনের তথ্য পাওয়া যায়। কেনো এই বিদ্রোহ, তার হেতু খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় সংগঠনের মধ্যে কেকার আধিপত্য বিস্তারে অনেক নেতাই কোনঠাসা। তাছাড়া আসন্ন পৌর নির্বাচনে কেকা প্রার্থী হচ্ছেন এবং দল থেকে মনোনায়ন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, এমনটি আমলে এনে অপরাপর সম্ভব্য প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের উস্কে দিয়ে একটি উতপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে কেকার লাগাম টেনে ধরার কৌশল নিতেই এই বহিস্কারের দাবি তোলে। একদিকে সুগন্ধা স্কুল নিয়ে বিতর্ক অন্যদিকে পারভীন আক্তার নামক এক নারীকে অপহরণ পরবর্তী চুল কর্তনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের নিয়ে জুট ঝামেলার মাঝে সেই ইস্যুকে পুজি করে তার বস্কিারের দাবি ওঠায় সঙ্গত কারণে শারমিন মৌসুমি কেকা কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন।

দলীয় সূত্র জানায়, মাঠে থাকা নেত্রী কেকাও কম নয়। তিনি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ওই বৈঠকের পরদিন সকালে ঢাকায় রওনা দিয়ে সন্ধায় পৌছান। উদ্দেশ, তার বহিস্কারের রেজুলেশন যদি পাঠায় তার পূর্বে নেতা আমির হোসেন আমুর সাথে সাক্ষাৎ করে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার তার ব্যখ্যা উপস্থাপন করে জেলার রাজনীতি সম্পর্কে অবহিত করা।

ওই সূত্রটি জানায়, প্রথমে কয়েক দফা চেষ্টা করে নেতার সাথে সাক্ষাৎ লাভে ব্যর্থ হন বেশ কয়েকটি বৈঠকে আমির হোসেন আমু ব্যস্ত থাকার কারনে। পরে মঙ্গলবার রাতে কেকা তার বেশ কয়েক জন অনুসারী নিয়ে স্কাটনের বাসায় নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় জেলার এই নেত্রী হাইকমান্ডের চালকদের একজন নেতা আমির হোসেন আমুর সাথে একান্তে বেশকিছু সময় আলোচনা করেন।

অবশ্য এই প্রতিবেদকের কাছে মঙ্গলবার রাতে কেকা জানান, নেতার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে বটে কিন্তু একান্তে নয়, সকলের সম্মুখেই তিনি তার অবস্থান ব্যখ্যা দিলে আমির হোসেন আমু বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। কেকার অভিমতের যে সুর পাওয়া যায় তাতে অনুমান করা গেছে বিপাকে পড়া এই নেত্রী নিশ্চিত হয়েছেন তার বহিস্কারের বিষয় এখনো কোনো রেজুলেশন ঢাকায় পৌছেনি। তবে জেলার নেতৃত্বের একটি অংশ খান সাইফুল্লাহ পনির ঢাকায় থাকায় তাকে অনুকূলে এনে কেকা প্রসঙ্গে একটি চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রফল তৈরির প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছেন। কিন্তু জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাস্থ্যগত কারণে দুরত্ব বজায় রেখে চলায় বিদ্রোহীরা ভিন্ন মাধ্যমে তাদের নেতাকে কেকার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আপতত কৌশল নিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে জেলা আ’লীগের সভাপতি শাহ আলম সরদারের ভূমিকা কি এবং তিনি কোন পক্ষে তা কেউ পরিস্কার করে বলতে পারছেনা তার কৌশলি পথচলার কারণে।

শাহ আলম সরদার আসলে কি চান অথবা অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এজেন্ডা বিহীন হঠাৎ করে অপ্রসাঙ্গিক ভাবে কেনো কেকার বিরুদ্ধে বহিস্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আলোচনায় আসলো তা জানতে এই প্রতিবেদক গত দুই দিন ধরে একধিকবার তার সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে একটি সূত্রের দাবি জেলা সভাপতি কেকার অনুকূলে নয়, তবে এখনই প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখতে চাননা। সম্ভবত ঢাকায় কেকার মিশন কিছুটা সফল অনুমান করায় তিনি কৌশলি পথে হাটে প্রাসঙ্গিক এই বিষয় নিয়ে নেতার দুয়ারে পৌছাতে চান। কারণ আমির হোসেন আমু বিহীন কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অন্তত ঝালকাঠির আ’লীগের রাজনীতিতে অসম্ভব। তাছাড়া সাংগঠনিক কিছু ত্যাগী কর্মকান্ডে শারমিন মৌসুমি কেকার প্রতি নেতার দুর্বলতা এখন কতুটুকু তা পরিমাপ করতে চান যেমন শাহ আলম তেমন সাইফুল্লাহ পনির। জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ পনির ঢাকায় থেকে নিজেকে এই মুহূর্তে বিতর্কের বাইরে রেখে তিনিও কৌশলি পন্থায় সংগঠনের হাইকমান্ড অথবা তাদের শীর্ষ নেতার মনভাব আঁচ করতে চান।

দুই নেতা যখন এই কৌশল নিয়েছেন কেকা তখন কাউকেই নিজের অনুকূলে না মনে করে সরাসরি ঢাকামুখী হয়েছেন। দেখা করেছেন তার নেতা আমির হোসেন আমুর সাথে, সেই সাথে হাইকমান্ডের বেশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল নেতার সাথে সাক্ষাৎ করে ষড়যন্ত্রের কবল থেকে তাকে মুক্ত করার অনুরোধ রেখে চলমান ঝালকাঠির রাজনীতির হালচিত্র তুলে ধরেছেন। সেক্ষেত্রে পজিটিভ ইঙ্গিত পাওয়ায় এই নেত্রী এখন ঢাকা থেকে ঝালকাঠিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন, এমন খবরে বিদ্রোহীরা তাদের আকাঙ্খার সাফল্যতা দেখার ক্ষেত্রে সন্দেহের দুলাচলে অনেকটাই হতাশ বলে আভাস পাওয়া গেছে।’