নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: তাঁর পুরো নাম মোঃ আরিফ উদ্দিন আহমেদ মুন্না। মিডিয়াপাড়ায় তিনি আরিফ আহমেদ মুন্না নামে পরিচিত। সাহিত্যের ভুবনে তাঁর পরিচিতি আহমেদ মুন্না নামে। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। তবে তাঁর বিচরণ সর্বত্র। আদর্শিক সাংবাদিকতা তাঁর মূল পেশা হলেও একাধারে তিনি একজন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার কর্মী। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলামসহ লেখালেখির সকল শাখায় তাঁর পদার্পণ ছোটবেলা থেকেই। কাজী নজরুলের মতোই তাঁর লেখায় সবসময় দ্রোহ-বিদ্রোহ, প্রেম ও প্রতিবাদের আবহ থাকে।

তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে কখনো তিনি সমাজের বিভিন্ন অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরেন। আবার কখনো সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা লেখেন তিনি। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি আপোষহীন এবং অন্যায়-অসঙ্গতি, নির্যাতন-জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়াতে পছন্দ করেন। সর্বদা ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী একজন আদর্শিক মানুষ তিনি।সাংবাদিকতার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কবিতা লেখেন তিনি। এ পর্যন্ত তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখির বাইরেও তিনি শিক্ষা, সুশাসন, মানবসেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত যুক্ত রয়েছেন।

তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি ছিলেন। থানা বিভক্ত হওয়ার পরে তিনি বরিশাল বিমানবন্দর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিমানবন্দর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিগত ২০০১ সালে স্নাতকোত্তর শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে তিনি পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রথমে দৈনিক আজকের পরিবর্তন ও আজকের বার্তার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পেশাদারি সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা তাঁর। এরপরে নিজের মেধা ও দক্ষতায় কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তাঁর লেখনী শক্তি ও গুণাবলীর দ্বারা অল্পদিনের মধ্যেই তিনি যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দেশবরেণ্য সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হন।

এরপরে প্রথিতযশা সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের হাত ধরে ২০১০ সালে তিনি যুগান্তর ছেড়ে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০১২ সালে তিনি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকায় নিয়োগ পান। নিউ নেশন ছাড়াও তিনি ইংরেজি ডেইলি নিউ এজ এবং ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার পাশাপাশি বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক মতবাদ এবং বরিশাল সমাচার পত্রিকায় কাজ করছেন। এছাড়াও তিনি বরিশাল বিভাগের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বরিশাল টাইমসের সহকারী সম্পাদক এবং এখনই সময় পোর্টালের এডমিন। সাংবাদিকতার দীর্ঘ পেশাজীবনে তিনি শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও বেশকিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একজন প্রতিভাবান সংগঠক ও মানবাধিকার কর্মীও বটে। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের সর্ববৃহৎ নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কমিটির বাবুগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বাবুগঞ্জ উপজেলা ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বাবুগঞ্জ শিক্ষা-সামাজিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলার সরকারি আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং উপজেলা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম সদস্য।

তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ছাড়াও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একজন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সুবক্তাও বটে। ছাত্রজীবনে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ব্যান্ডদল, গণনাটক ও মঞ্চনাটকের সাথে যুক্ত ছিলেন। অনন্যা শিল্পী গোষ্ঠী নামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি নাট্য ও সাংস্কৃতিক দল রয়েছে। ছাত্রজীবনে টানা প্রায় ১০ বছর তিনি সেই নাটক ও সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গনেও তিনি ছিলেন অনবদ্য এক সংগঠক। ছাত্রজীবনে বাবুগঞ্জ উপজেলায় ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, কাবাডি ও ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন। নিজেও খুব ভালো ক্রিকেট খেলতেন তিনি। একজন হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বত্র তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ১৯৯৭ সালে বরিশাল বিভাগে অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়ে একটি রঙিন টেলিভিশন পুরস্কার জিতেছিলেন। পরে অবশ্য একটি ক্লাবে তিনি সেই পুরস্কারের টেলিভিশনটি দান করেছিলেন।

সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দম্পতির একমাত্র সন্তান হিসেবে ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা গ্রামে। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার উদ্দিন আহমেদ সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। ১৯৭১ সালে বেইজ কমান্ডার আবদুল মজিদ খানের অধীনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা লাভের পরে সোনালী ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে যোগদান করে সততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ম্যানেজার থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদ অলংকৃত করে অবসরে যান।

তাঁর মা’ও একজন স্বনামধন্য সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। অভিজাত পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে তিনি নিজের সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ ও দক্ষতার মাধ্যমে সর্বমহলে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত বিনয়ী, সদালাপী এবং পরোপকারী মানুষ হিসেবে তিনি সর্বসাধারণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সাংবাদিকতা জীবনে একটি আদর্শিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছেন সাংবাদিক আরিফ আহমেদ মুন্না।