স্ত্রীর লাশ ভেলায় ভাসিয়ে কবরস্থানে নিলেন স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >> কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ারচর গ্রামে সড়ক না থাকায় চিংড়ি ঘেরের পানিতে বাঁশের ভেলায় ভাসিয়ে এক বৃদ্ধার লাশ নেওয়া হয়েছে কবরস্থানে। আজ বুধবার (২১ জুলাই) বিকেলে লাশ ভাসিয়ে নেওয়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।

মারা যাওয়া বৃদ্ধা উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ারচর গ্রামের গোলাম শরীফের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৭০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাতে দিলোয়ারা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। বুধবার ঈদুল আজহার দিন সকাল ৭টার দিকে গোলাম শরীফ তার স্ত্রীর মরদেহ একটি চিংড়ি ঘেরের পানিতে বাঁশের ভেলায় ভাসিয়ে দাফনের জন্য গ্রামের আজিজিয়া জামে মসজিদের মাঠে নিয়ে যান। এমন দৃশ্যের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পোস্টের নিচে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিধের নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

মৃত দিলোয়ারা বেগমের আত্মীয়স্বজন জানান, মৃতদেহটি কবরস্থান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সড়কটি রয়েছে, তা খুবই খারাপ। একটি খাটিয়া নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়া বড়ই দুষ্কর। তাই বাধ্য হয়েই একটি বাঁশের ভেলায় মৃতদেহ বহনকারী খাটিয়ে রেখে ভাসিয়ে কবরস্থানে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, শুধু লাশ দাফন নয়, গ্রামের লোকজনের যাতায়াতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ারচর গ্রামের ফোরকানের দোকান থেকে আজিজিয়া জামে মসজিদ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক গত ২০ বছরেও সংস্কার করা হয়নি।

তবে স্থানীয়দের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহা জামাল। এ ইউপি সদস্য বলেন, ২০ বছর ধরে সড়ক সংস্কার হয়নি, এ অভিযোগ সঠিক নয়।

উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহা জামাল বিষয়টি স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তার ওয়ার্ডের ফোরকানের দোকান থেকে আজিজিয়া জামে মসজিদ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ চেইন সড়কের মধ্যে প্রায় ৩ থেকে ৪ চেইন সড়কের অবস্থা খারাপ। তাই ওই লাশ পানিতে ভাসিয়ে কবরস্থানে নিয়েছে মৃতের স্বজনেরা।

তিনি চিংড়ি ঘের মালিকদের দায়ী করে বলেন, সড়কটি সংস্কার করলেও এক বছরেও টিকে না। দুই পাশের চিংড়ি ঘেরের কারণে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে সড়ক ভেঙে যায়। সড়কটি সংস্কারের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তার ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ মোটামুটি ভালো।

ভেলায় ভাসিয়ে লাশ কবরস্থানে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়কটি সংস্কার করার জন্য দুই পাশের জমির মালিকরা মাটি দিতে চান না। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অপরিকল্পিত বাড়িঘর ও চিংড়িঘেরের কারণে সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। তিনি এ জন্য চিংড়ি ঘেরের মালিকদের দায়ী করেছেন।’