নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরে ছাত্রদল কর্মী সোহাগ সেরনিয়াবাত (২৫) হত্যা মামলার রায়ে দুই আসামিকে ফাঁসি এবং চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওই মামলার ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বরিশালের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক টিএম মুসা এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইমরান হাওলাদার ব্যতীত অন্য সকল আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মামলার প্রধান আসামি উজিরপুর পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও গুঠিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক লালন মহুরী। অপরজন একই উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রিয়াদ সরদার।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত লালনের ভাই মেঝো ভাই ইমরান হাওলাদার, ছোট ভাই মামুন হাওলাদার এবং তাদের সহযোগী বিপ্লব পাটনী ও ওয়াসিম সরদার। এছাড়া এই হত্যা মামলা থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- তারেক হাওলাদার, বাবু দাস, শিমুল, সুজন মল্লিক, সোহাগ তালুকদার, আলতাফ হোসেন, সজিব, সুমন মোল্লা, আলমগীর ও বিপ্লব দাস।

এদিকে ছাত্রদল কর্মী সোহাগ সেরনিয়াবাত হত্যা মামলার এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের বাবা এবং বাদী পক্ষের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে এ রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি দাবি করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বলেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। আসামি পক্ষের আইনজীবী কাজী মুনিরুল হাসান বলেন, এই মামলার কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই। রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চাদালতে যাবেন।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, উজিরপুর পৌর সদরের কালীবাড়ী রোডের বাসিন্দা ফারুক সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে ছাত্রদল কর্মী মো. সোহাগ সেরনিয়াবাত। তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে নিজ বাড়ি সংলগ্ন উপজেলা কলেজ গেট নামকস্থানে আলিফ ওয়ান ফ্যাশন নামে একটি পোষাকের দোকান দেয়।

২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোহাগ মোটরসাইকেল যোগে তার বন্ধু সাইফুলকে নিয়ে এলাকার ছোট ভাই জাহাঙ্গীরকে স্থানীয় নীলখোলা নামিয়ে দিতে যান। জাহাঙ্গীরকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ভিআইপি রোড হয়ে বন্ধু সাইফুলকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়ির দিকে ফিরছিলেন সোহাগ। এ সময় ভিআইপি রোডের হাঁসি ভিলা এলাকা অতিক্রমকালে আগে থেকে সেখানে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা সোহাগের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে।

মোটরসাইকেল থামানোর সাথে সাথে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সোহাগকে উপর্যপুরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরেরদিন ৫ সেপ্টেম্বর নিহত ছাত্রদল কর্মী সোহাগের মামা খোরশেদ আলম নান্টু বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

একই বছরের ১১ নভেম্বর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন চৌধুরী ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ৩১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক ওই রায় ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহাগ সেরনিয়াবাত হত্যার ঘটনার প্রায় এক বছর আগে সোহাগ সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি জিয়াউল হক লালন মুহুরির ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়া ফাঁসির অপর দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ সরদার ও হত্যার শিকার ছাত্রদল কর্মী সোহাগ সেরনিয়াবাত খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

বন্ধুত্বের একপর্যায়ে সোহাগ তার বন্ধু রিয়াদ সরদারের স্ত্রী ফৌজিয়া নাভিন ওমির (এক সন্তানের জননী) সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়। শেষাবধি বন্ধু রিয়াদ সরদারের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং বিয়ে করে সংসার সাজিয়েছিলো সোহাগ সেরনিয়াবাত। পরবর্তী সময়ে এসব ঘটনার জের ধরেই সোহাগ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।