নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল >>  একটি মার্কিন ইহুদি পরিবারে জন্ম মিশেলের। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা ধর্মান্তরিত হলে তিনিও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু খ্রিস্টধর্মে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে না পাওয়ায় ইহুদি ধর্মে ফিরতে চান। পরিশেষে ইহুদি ধর্মও তাঁকে আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মহানবী (সা.)-এর জীবন-ইতিহাস ও পবিত্র কোরআন তাঁকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ব করে। তাঁর ভাষায়—

আমি নিউ ইয়র্কের একটি ইহুদি পরিবার থেকে এসেছি। আমার মা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তবে তিনি ইহুদি ছিলেন। তিনি কাউকে ইহুদি পরিচয় দিতে স্বস্তিবোধ করতেন না। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি একজন ক্যাথলিককে বিয়ে করেন এবং খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি আমাদেরও খ্রিস্টান হিসেবে গড়ে তোলেন। কিন্তু পাঁচ বছর বয়স থেকে আমি বলতাম, যিশুখ্রিস্টও একজন উপাস্য? আমি এই বিশ্বাসে কখনো স্বস্তিবোধ করতাম না।

আমরা সৎ বাবার দেশ ফিলিপাইনে যাই। সেখানে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সৎ বাবা ধীরে ধীরে আমার প্রতি এবং আমার দুই ভাইয়ের প্রতি নিপীড়ক হয়ে ওঠে। কঠিন জীবনযাত্রার প্রভাবে আমার ভাষাগত দুর্বলতা থেকে যায়, আমার এক ভাই মদ্যপ হয়ে ওঠে এবং অন্যজন হীনম্মন্যতার শিকার হয়। যখন আমি বড় হলাম এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এলাম, তখন আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমি কঠোর পরিশ্রমে মনোযোগী হলাম। স্রষ্টার জন্য আমার জীবনে কোনো সময় ছিল না, অতীতেও কখনো ছিল না। আমি অনুভব করতাম না যে স্রষ্টা আমাকে কোনোভাবে সাহায্য করছেন। আমি আমার শেকড়ে ফেরার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ইহুদি ধর্ম আমার মনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারল না। তাই চেষ্টা ছেড়ে দিলাম।

বিভিন্ন সময় মুসলিমদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তারা এমন পোশাক পরিধান করে কেন এবং তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে থাকে কেন? ইসলামবিষয়ক প্রশ্নগুলো আমার মনে বারবার ফিরে আসতে থাকে, ধর্মটি সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করি। আমি মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও ইতিহাস পাঠ করি। তাঁর জীবন থেকে আমি দয়া, উদারতা এবং কঠিন সময়ে ধৈর্যধারণের শিক্ষা লাভ করি। নিজের কাছে নিজের জীবনকে দিকহীন ও দিশাহারা মনে হয়। সুতরাং আমি আরো বেশি পড়তে শুরু করি। সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর মনে হলো আমি ঘরে ফিরেছি। এত দিন আমি এখানেই আসতে চেয়েছিলাম। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! এরপর আর কখনো ইসলামবিমুখ হইনি, একত্ববাদের বিশ্বাস থেকে কখনো সরে আসিনি। মুসলিম হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু ইসলাম আমাকে ধৈর্যধারণে সাহায্য করে। দুঃখ-ব্যথার সময় আমরা শুধু আল্লাহর কাছে যেতে পারি। ইসলামই চূড়ান্ত সত্য ও পূর্ণাঙ্গ জীবনধারা। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষ জাতির প্রতি প্রেরিত শেষ সত্য এবং শেষ সুযোগ। আমি আশা করি, একদিন পৃথিবীর মানুষ ইসলাম সত্যতা ও সৌন্দর্য, শান্তি ও শৃঙ্খলা সম্পর্কে  জানতে পারবে।

স্টোরিজ অব নিউ মুসলিমস গ্রন্থ অবলম্বনে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা