বরিশালে ইলিশ পরিবহনের কাউন্টার বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালঃ বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে  মাওয়া পরিবহন প্রাঃ লিঃ ইলিশ এর কমিশন কাউন্টার বাগানোর অভিযোগ উঠেছে। মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই দুই পরিবহন শ্রমিক নেতা জেলা পরিবহন সেক্টরে ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্যের অশুভ প্রভাব বিস্তার করছে।

অভিযোগ রয়েছে জেলা মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়নের ওই দুই নেতা পুরাতন কমিশন কাউন্টার পরিচালককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ছালেক হোসেন নামে একজনকে নতুন করে ইলিশ পরিবহনের কাউন্টার বরাদ্দ দিয়েছেন।

সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরের সানুহার বাসস্ট্যান্ডে ইকবাল হোসেন হাওলাদার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ২০০৮ সালে ৩০ জুন মাওয়া পরিবহন প্রাঃ লিঃ ইলিশ এর কমিশন কাউন্টার বরাদ্দ দেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলী আকবর। সেই থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত কোম্পানির সকল নিয়ম মেনে কাউন্টার কমিশনটি চালিয়ে আসছিলেন ইকবাল হোসেন ও তার অন্য অংশীদার সৈকত হাওলাদার। সম্প্রতি এই রুটে পরিবহনটির এসি বাস চালু হওয়ায় জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন সরদার পরিবহন কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের জিম্মির মাধ্যমে নতুনভাবে কমিশন কাউন্টার বাণিজ্য শুরু করেছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, সানুহার বাসস্ট্যান্ডে ইলিশ পরিবহনের কাউন্টারটি চলতি মাসের ১ মে পর্যন্ত কোম্পানির প্রকৃত কমিশন ইকবাল ও সৈকত হাওলাদারের পরিচালনায় ছিলো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাত্র দুইদিন পরে ৩ মে স্থানীয় যুবলীগ নেতা সালেক হোসেন হাওলাদার ও মোস্তাফিজুর রহমান জেলা বাস মালিক গ্রুপের প্রভাব দেখিয়ে সানুহার বাসস্ট্যান্ডে ইলিশ পরিবহনের যাত্রী টিকেট কাটা শুরু করেন। একই সাথে তারা নতুন কাউন্টার কমিশনের পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন দাবি করে পুরাতন কাউন্টার পরিচালনায় থাকা স্থানীয় যুবলীগ নেতা সৈকত হাওলাদার ও তার বাবা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. খোকন হাওলাদারকে বাসের যাত্রী টিকেট না কাটার জন্য হুমকি-ধামকি দেয়। এরপরই প্রকৃত কমিশন কাউন্টার পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সৈকত হাওলাদার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বলেন এবং জানতে পারেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো ফরিদ হোসেন সরদার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে কাউন্টার বানিজ্য করেছেন।

কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের বরিশাল রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধের হুমকি দিয়ে ওই নতুন কাউন্টার কমিশনকে জেলা বাস মালিক গ্রুপের একটি অনুমতি পত্র দেয়া হয়। আর সেই অবৈধ অনুমতি পত্রের প্রভাবেই সানুহার বাসস্ট্যান্ড থেকে ছালেক ও মোস্তাফিজুর রহমান যাত্রী টিকেট কাটছেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ মে ছালেক ও মোস্তাফিজুর সানুহার বাসস্ট্যান্ডে ইলিশ পরিবহনের যাত্রী টিকেট কাটা শুরু করলে প্রকৃত কাউন্টারের পরিচালক সৈকত হাওলাদার নিষেধ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তাফিজ ও ছালেক সৈকতকে  মারধর করে।

কাউন্টার পরিচালক সৈকত হাওলাদার জানান, পরিবহন কোম্পানির নিয়মানুযায়ী তার নিকট থেকে কাউন্টার তুলে নেওয়ার কমপক্ষে তিন মাস আগে নোটিশ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু পরিবহন কোম্পানির সেই নিয়ম না মেনে জেলা বাস মালিক গ্রুপের সম্পাদক কিশোর কুমার ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো ফরিদ সরদার ছালেককে কাউন্টারের দায়িত্ব দেন। এ ঘটনায় সৈকত হাওলাদার বাস মালিক গ্রুপের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে ইলিশ পরিবহনের কাউন্টার বরাদ্দ নিয়ে জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতাদের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে জানতে জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে ইলিশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী আকবর জানিয়েছেন, বরিশালে ইলিশ পরিবহনের কাউন্টার বরাদ্দ জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতাদেরকেই দেয়া হয়েছে। কেন বাস মালিক গ্রুপ ইলিশ পরিবহনের কাউন্টার বরাদ্দ দিবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের একজন সদস্য। এজন্য কাউন্টার বরাদ্দের দায়িত্বটা তাদেরকে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে পুরাতন সকল কাউন্টার পরিচালকদের তাদের জামানাতের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এখন নতুনভাবে কমিশন কাউন্টার বরাদ্দ দিবেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতারা।

এ সময় কাউন্টার বরাদ্দ নিয়ে জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতারা উৎকোচ আদায় করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

সরকার দলীয় নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা পরিবহনগুলোর কারণে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। মানা হচ্ছে না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়মনীতি। পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক তৎপরতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। যার কারণে জেলা-উপজেলার সড়ক পরিবহনেও চলছে তাদের তাণ্ডব।