‘বাসে ডাকাত পড়েছে বলে দৌড়ে পালিয়েছে চালক’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: ভোরে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকার বাসিন্দাদের। কয়েকজন দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন, সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে একটি বাস দুমড়ে-মুচড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে যাত্রীদের ডাক-চিৎকার ও আর্তনাদ। ঘটনাস্থলে আসার সময় একজনকে আহত অবস্থায় দৌড়াতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন।

দৌড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসে ডাকাত পড়েছে’। পরে জানা যায়, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা দিয়েছে। আর ওই ব্যক্তি বাসটির চালক। তবে পরে আর তাকে ঘটনাস্থলে দেখতে পাওয়া যায়নি। এরপর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯- এ কল করে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা।

রোববার (২৯ মে) ভোর ৫টায় বামরাইল এলাকায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নারী ও শিশুসহ ১০ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। বাসের সুপারভাইজারের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং চালক পালিয়ে গেছেন। বাস ও গাছ কেটে হতাহতদের উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে বাইরে বেরিয়ে দেখি, যমুনা লাইনের একটি বাস সড়কের পাশে থাকা বড় রেইন্ট্রি গাছে ধাক্কা দিয়ে থেমে আছে। বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এরপর জানালা দিয়ে কয়েকজনকে উদ্ধার করে আমরা পানি দিই। ভেতরে কয়েকজনের লাশ পড়ে ছিল। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের হাত-পা বিছিন্ন হয়ে গেছে। মুখমণ্ডল থেতলে গেছে দুই জনের। এরপর ৯৯৯-এ কল করে দুর্ঘটনার খবর দেওয়া হয়।’

এর আগে চল্লিশোর্ধ্ব একজনকে এক ব্যক্তিতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেনÑ বাসে ডাকাত পড়েছে। কিছুক্ষণ পরে ওই ব্যক্তি উধাও হয়ে যান। পুলিশের ধারণাÑ পালিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি বাসচালক। দুর্ঘটনার পর আত্মরক্ষার্থে তিনি পালিয়ে গেছেন।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আখতারুজ্জামানও অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলছেনÑ তাদের সন্দেহ দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বাসচালক। জনরোষ থেকে নিজেকে রক্ষায় কৌশল হিসেকে বাসে ডাকাত পড়ার কথা বলেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে মাঠপুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’