বরিশালে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে হত্যা: ভাইসহ ডায়াগনস্টিক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন ওরফে বাবুল মোল্লা (৬২) নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। শনিবার নিহতের ভাই কামাল উদ্দিন মোল্লা বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় এ মামলা করেন।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন বলেন, মামলায় নগরের জর্ডন রোডের গেইন ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার ছোট ভাইকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলাটিতে আরও ৫ থেকে ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে গিয়াস উদ্দিনের জানাজা শেষে এ ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতারা। জানাজার আগে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলছিলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক, কর্মচারী ও দালালদের কারণে গিয়াস উদ্দিন নিহত হয়েছেন। তখন দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

নিহতের ভাই কামাল উদ্দিন মোল্লা জানান, গত বুধবার বেলা দেড়টার দিকে গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বাসা থেকে জর্ডন রোডে তাঁর নিজের বাসায় আসছিলেন। তখন গ্রামের এক সহজ-সরল রোগীকে ভুল বুঝিয়ে বাসার নিচতলায় গেইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসা এক অটোরিকশাচালকের সঙ্গে রোগীর তর্ক হচ্ছিল। ওই অটোরিকশাচালক ছিলেন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল। এ সময় গিয়াস উদ্দিন রোগীর পক্ষ নিয়ে দালালকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইলে একপর্যায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিকের নির্দেশে অটোরিকশা দিয়ে গিয়াস উদ্দিনকে ধাক্কা দেন চালক। তখন অপর এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে তাঁর ভাইয়ের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মালিক এস এম রফিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা নিছক দুর্ঘটনা। আর ঘটনার সময় তাঁর ভাই শহরের বাইরে ছিলেন। কিন্তু তিনি কীভাবে দেখলেন, তাঁর ভাইকে আমার নির্দেশে ক্লিনিকের লোকেরা মাথায় আঘাত করেছেন।’

সাবেক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে ও দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ‘বরিশাল নগরবাসী’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাসদের বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, স্থানীয় দৈনিক বরিশাল বার্তার সম্পাদক নুরুল আমিন, নিহত গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বড় ভাই সালাউদ্দিন মোল্লা, বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ্ আমিনুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর আ ন ম সাইফুল আহসান, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া পারভীন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান এবং মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাযহারুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে অবিলম্বে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ আছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। গিয়াস উদ্দন মোল্লা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি রাখেন।’