ঝালকাঠি/ ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও ঝালকাঠি:: ঝালকাঠির নলছিটিতে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বিজন কৃষ্ণ খরাতির বিরুদ্ধে। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর বানানোয় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী বলেও অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে নলছিটি উপজেলায় ৩৪টি ঘর নির্মাণের অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু পিআইও বিজন কৃষ্ণ বরাদ্দকৃত ৩৪টি ঘরের সাতটির টাকাই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া বাকি যে ঘরগুলো তৈরি করেছেন তাও খুব নিম্নমানের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের পাওতা গ্রামের পারুল, তৌকাঠি গ্রামের গোলাম হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আকলিমা, বারাইকরন গ্রামের নজরুল ইসলাম মাঝি ও কাপড়কাঠি গ্রামের আনোয়ার ফকিরের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও আদৌ তারা কোনো ঘর পাননি।

এছাড়া মগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ মগড় গ্রামের মৃত লিয়াকত আলি মাঝির স্ত্রী নাজমিন এবং দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামের শারমিন বেগমের নামে ঘর বরাদ্দ থাকলেও অসহায় এ পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত। তবে কাগজে তাদের নাম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিজন কৃষ্ণ খরাতির বিরুদ্ধে।

কাপড়কাঠি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আনোয়ার ফকির বলেন, ‘আমার নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে আমিই জানি না। ঘর পাওয়া তো দূরের কথা।’

দক্ষিণ মগড় গ্রামের বাসিন্দা অসহায় নাজমিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বামী নাই, বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমাকে একটি ঘর করে দিবে এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কিছু টাকাও দিয়েছি। কিন্তু আমারে ঘর দিলো না। শুধু কয়েক পিস টিন দিছে।’

বেড়াবিহীন ঝুপড়ি ঘর দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন সন্তান নিয়ে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে থাকি। আমার নামে ঘর আইলো আর আমি পেলাম শুধু কয়পিস টিন।’

বারাইকরন গ্রামের বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম মাঝি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমাদের একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। এ ঘর দেওয়ার আগে আমার নামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ হয়। কিন্তু আমাকে বরাদ্দকৃত ঘরটি দেওয়া হয়নি। তাহলে আমার নামের ঘরটি গেলো কোথায়?’

ভরতকাঠি গ্রামের শারমিনের স্বামী শহিদ বলেন, ‘আমাকে ঘর দেওয়া হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তা বলেছেন পরবর্তীতে ঘর এলে দিবেন।’

শহীদ বলেন, ‘ঘরের তালিকায় আমার নাম আছে, তাহলে আমার ঘরটি বা ঘরের টাকা কোথায় গেলো?’

মগড় ইউনিয়নের খাওক্ষীর গ্রামের মেরি বেগম বলেন, ‘অনেক দৌড় ও কষ্টের পরে গৃহহীনদের জন্য ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের তালিকায় আমার নাম ওঠে। কিন্তু আমি ঘর পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে দুই সাংবাদিকের তৎপরতায় কিছুদিন আগে ঘর পেয়েছি। তবে একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী। এজন্য ওই ঘরে এখনো উঠতে পারিনি।’

নিয়ম অনুযায়ী এগুলো দেখভালের দায়িত্ব নলছিটির প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) বিজন কৃষ্ণ খরাতির। ঘরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব ঘরের বিল পরিশোধ করা হয়নি। প্রতি ঘর বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’

বরাদ্দকৃত ঘরের বাকি টাকা কোথায় গেলো জানতে চাইলে বিজন কৃষ্ণ বলেন, ‘ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঝালকাঠি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অবশ্যই আমি তদন্ত করে দেখবো।’