গত ১৬ জুলাই রেলের কাজের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে পদ্মা সেতুর নিচতলা বুঝিয়ে দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিংয়ারিং কনস্ট্রাকশন)।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচল করবে আগামী বছরের জুনে। এ লক্ষে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের। ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে রেললাইন বসানোর কাজ। এরই মধ্যে বসে গেছে ভাঙ্গা জংশনের পশ্চিম প্রান্তে সাড়ে তিন কিলোমিটার রেলপথ। শেষের পথে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের ওপর ট্র্যাক বসানোর কাজ। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ভাঙ্গা জংশনসহ তিনটি রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ।

গত ১৬ জুলাই রেলের কাজের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে পদ্মা সেতুর নিচতলা বুঝিয়ে দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিংয়ারিং কনস্ট্রাকশন)।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই শুরু হবে সেতুতে রেল স্লিপার ঢালাইয়ের কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের ৬ দশমিক ৬২ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ওপর বসে গেছে রেল স্লিপার। ভাঙ্গায় নির্মাণাধীন জংশনের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। মাটি ভরাট করে নির্দিষ্ট পরিমাণে উঁচু করে রেললাইন বসানোর উপযোগী করে পাথরের লেয়ারের ওপর বসানো হচ্ছে রেলের স্লিপার।

রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপে রয়েছে ঢাকা থেকে মাওয়া, দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা ও শেষ ধাপে রয়েছে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি ৮২.৩ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। সবচেয়ে কম এগিয়েছে ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ। এই ধাপের অগ্রগতি ৫১.১৬ শতাংশ।

আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু করার লক্ষে এই অংশের কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার অংশে এখন চলছে রেলপথ, রেলস্টেশন ও জংশন নির্মাণকাজ। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ‘মাওয়া’, ‘পদ্মা’ ও ‘শিবচর’ নামে তিনটি স্টেশনের পাশাপাশি ভাঙ্গায় নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক রেলওয়ে জংশন। মাওয়া স্টেশনের ৮০ শতাংশ, পদ্মা স্টেশনের ৭২ শতাংশ ও শিবচর স্টেশনের ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভাঙ্গা জংশনের কাজ এগিয়েছে ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। পদ্মা স্টেশনের মূল ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ শেষে শ্রমিকরা প্লাস্টার করছেন। শেষের দিকে রয়েছে স্টেশনের ডরমিটরি টাইপ-৩, ডরমিটরি টাইপ-৪, গ্যাং হাট, ইলেকট্রিক সাবস্টেশন ও প্ল্যাটফর্মের নির্মাণকাজ। এই স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ হলেও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা।

শিবচর স্টেশনেও প্রায় একই কাজে ব্যস্ত এখানকার শ্রমিকরা। এই স্টেশনের কাজ এগিয়েছে ৩৬ শতাংশ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার লক্ষে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে নির্মাণকাজ।

নির্মাণাধীন ভাঙ্গা জংশনে গিয়ে দেখা যায় বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছোট বড় ১৯টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিশাল এলাকাজুড়ে এসব অবকাঠামো নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক কাজের গুণগত মান তদারকি করা হচ্ছে। পদ্মার দক্ষিণে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে এই স্টেশন থেকেই।

ভাঙ্গা জংশনে কর্মরত শ্রমিক মামুন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে ভবন নির্মাণে ১৩০ জন শ্রমিক কাজ করতেছি। জংশনের পানি নামার জন্য বিশাল ড্রেন নির্মাণ করছি। এ ছাড়া রড বাইন্ডিং, এক্সকাভেটিং, রেললাইন স্থাপনসহ অনেক কাজ চলমান রয়েছে।’

পদ্মা স্টেশনের স্ট্রাকচারাল সুপারভাইজার ইঞ্জিনিয়ার আজফার আদনান সাংবাদিকদের জানান, এখানে মোট পাঁচটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষের পথে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। এ ছাড়া রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশনের সামনে প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ ও রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

ভাঙ্গা জংশনে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী হাসনাইন খোরশেদ মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাঙ্গা জংশনে স্টেশন ভবন, আবাসিক ভবন ও রেস্ট হাউসসহ মোট ১৯টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ভাঙ্গা জংশনের মূল ভবনের মতো এ রকম নান্দনিক শৈলীর স্থাপত্য এর আগে বাংলাদেশে নির্মাণ করা হয়নি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিএসসির অনেক প্রকৌশলী দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করছে। লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।’

মাওয়া-ভাঙ্গা রেল লিংক প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল লিংক প্রকল্পের তিনটি ভাগই দ্রুতগতিতে চলছে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশের ওপর। মাটি ভরাটের কাজ শেষের দিকে। ভায়াডাক্টের ওপর রেলস্লিপার বসানোর কাজও শেষের দিকে। ভাঙ্গা অংশ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।’

সংবাদ তথ্য সূত্র: নিউজবাংলা।