শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যু: এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতির আদেশ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল জজ কোর্টের আইন শিক্ষানবিশ রেজাউল করিমকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এক রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত রোববার (১৪ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এবং বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে এদিন রিভিশন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এনামুল হক মোল্লা।

আদেশের বিষয়টি বরিশালটাইমসকে নিশ্চিত করে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বলেন, বরিশালের শিক্ষানবিশ আইনজীবী রেজাউল করিমকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের মামলায় এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যকে অব্যাহতি দিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন, আমরা আগামী ৬ মাস পর (স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময়ের পর) এ ঘটনায় নতুন করে বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করবো।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান রোডের একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে আইন শিক্ষানবিশ রেজাউল করিমকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে রেজাউলের কাছে এলাকার দুই মাদককারবারির নাম জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি নাম জানেন না বললে তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং পকেটে মাদকের ইনজেকশন রাখার অভিযোগে মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আইনজীবী শিশির মনির জানান, গ্রেফতারের পর রেজাউলকে নির্যাতন করা হয় এবং পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে তার অবস্থার অবনতি হলে রেজাউলকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২ জানুয়ারি ভোররাতে ওই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এরপর রেজাউল করিমকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে তার বাবা ইউনুস মুন্সী স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকার করে।

পরে এ ঘটনায় একই বছরের ৫ জানুয়ারি ডিবির এসআই মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

আদালত মামলার শুনানি নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন মামলার বাদী ইউনুস মুন্সী।

হাইকোর্ট ২০২১ সালের ৩ মার্চ বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তারপর বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে ডিবির এসআই মহিউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের ওপর আদালতে মামলার বাদী ইউনুস মুন্সী নারাজি আবেদন জমা দেন। এরপর আদালত নারাজি আবেদন খারিজ করে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ দেন।

পরে আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন দায়ের করেন রেজাউলের বাবা ইউনুস মুন্সী।

সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার (১৪ আগস্ট) ওই রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করে বিচারিক আদালতে দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রেজাউল করিম বরিশাল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ইউনুস মুন্সীর ছেলে। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য জাকির হোসেন মিন্টুর সঙ্গে কাজ করতেন।’