আমাদের জীবন

হাসিবুর রহমান:: আমার মাসিক আয়টা খুবই সীমিত। খাওয়া- দাওয়া আর বাসা ভাড়া দেয়ার পর একদমই টাকা থাকে না বললেই চলে। তা দিয়ে হাত খরচটা কোনো মতে চালাতে হয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি, তাও আবার সবার বড়।

ছোটবেলা থেকে কর্মজীবী ছেলেদের মতো করে বড় হইনি বলে এখনো সংসারের হাল ধরতে পারিনি। নিজেরটা দিয়ে নামে মাত্র চলি। নিজের ইচ্ছেতেই বাড়িতে তেমন একটা যাই না। পকেটে টাকা থাকলে সকালে সামান্য কিছু খেয়ে টিউশন বাসায় যাই। তাও ১০ টাকার ওপরে উঠতে সাহস হয় না।

যেদিন টাকা থাকে না সেদিন টিউশন বাসায় নাস্তা দিবে সে আশায় থাকতে হয়। সবদিন কি সূর্যের আলো কপালে এসে পড়ে।সেক্ষেত্রে দুপুরে একত্রে খেয়ে নেই। _”আসসালামু আলাইকুম।

চাচা এক কাপ চা দিন, সাথে পাঁচ টাকা দামের একটা বিস্কুট দিবেন”। এক কাপ চা আর একটা রুটি হাতে নিয়ে একদম ভাবনার ঘোরে পড়ে গিয়েছিলাম। বয়সে প্রায় আমার মতো এই ছেলেটির চা চাওয়াতে ঘোর কাটল।

ছেলেটির আপাদমস্তক একবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম। আমার একটা বিশেষ গুন আছে। আমার মতো অবস্থার মানুষকে খুব দ্রুত চিনে ফেলি। তাই নিজেই আগ বাড়িয়ে তার সাথে কথা বললাম। পরিচিত হয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম।

ছেলেটি ঢাকায় যাচ্ছে। কনকনে শীতের এতো সকালে কেন যাচ্ছে সেটা জানতে চাইলে ও বলে এখান থেকে নাকি সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ছাড়ে। ভাড়া মাত্র চল্লিশ টাকা। অন্য সময় গেলে লোকাল বাসে দু’শো টাকা ভাড়া দিয়ে যেতে হবে।

যা দিয়ে দুদিন হোটেলে খাওয়া যাবে। আরও জানলাম ছেলেটি একটা বাসায় তিন বেলা খেয়ে টিউশন করায়। সে বাসার লোকজন কোথায় যেন বেড়াতে গেছে। দুদিন পর ফিরবে।

ওই টাকা দিয়েই এ দুদিন হোটেলে খাবে।

_”চাচা বিলটা রাখেন। আসি ভাই।

ওই যে বাস ছেড়ে দিয়েছে।

আল্লাহ্ চাইলে আমাদের আবার দেখা হবে। আল্লাহ্ হাফেজ”।

_”আল্লাহ্ হাফেজ”। ছেলেটিকে সৌজন্যমূলক বিদায়টাও জানাতে পারলাম না।

__নিজের কথা, নিজের কলমে।