বাবার ইচ্ছা পূরণে ১০টি গরু-মহিষের গাড়িতে বরযাত্রা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: মোটর গাড়ি কিংবা হেলিকপ্টারে নয়, এবার বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বিয়ে করতে গেলেন নিরব। আর এ বিয়ে দেখতে ভিড় জমায় শত শত নারী-পুরুষ। শুক্রবার বিকেলে এমনই এক ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে।

স্থানীয়রা জানায়, জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খামার নারায়ণপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে নিরব সাব্বিরের সাথে বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকতারের।

শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের দিন। নিরবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বরবেশে গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যাবে। বউমাও আসবে গরু গাড়িতেই।বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে বরবেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান নিরব।

গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া টাপুরযুক্ত গরু-মহিষের গাড়ি দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমায় বর ও কনের বাড়িতে। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে গরু-মহিষের গাড়িতে বরযাত্রার দৃশ্য অবলোকন করে। ছবি ও ভিডিও ধারণ করে অনেকেই। এমন আয়োজনে খুশি বর-কনের পরিবারসহ এলাকাবাসী। গ্রামবাংলার এই পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহও প্রকাশ করেন অনেকে।

বরের পিতা কুদ্দুস বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল, ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয় দুষ্কর। তাই মহিষের ৯টি এবং গরুর একটি গাড়ির আয়োজন করি ছেলের বিয়েতে। ছেলেও মেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে করেই বিয়ে করতে যায়।

কনের চাচা জয়নাল বলেন, ‘এটা গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য। এ রকম আয়োজনে অমরা খুশি।’  নারায়ণপুর গ্রামের আলম নামের এক ব্যক্তি জানান, তার বাবার কাছে শুনেছেন, তার দাদার বিয়েতে বরযাত্রী ও বর গরুর গাড়িতে করে যায়। এরপর আর গুরুর গাড়িতে বরযাত্রার কোনো অনুষ্ঠান এলাকায় হয়নি। দেখে ভালো লেগেছে।

মহিষের গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসা এক বৃদ্ধ জানান, ৪০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশীর বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে তিনি খুশি।উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি দীপেন রায় জানান, আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গরুর গাড়িতে বর যাত্রাসহ প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির কিছু কিছু আয়োজন লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য এগুলো ধারণ ও লালন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।