মুজিব দেখালেন আতিক, অভিভূত অশ্রুসিক্ত দর্শক
✪ আরিফ আহমেদ মুন্না ☞ শিশু রায়হান উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা নিয়ে তার বাবার সাথে হাসতে হাসতে ঢুকেছিল সিনেমা হলে। তবে সে বের হয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। কারণ, সে দেখেছে তার সমবয়সী শিশু রাসেলকে কী নৃশংসভাবে হত্যা করে মায়ের লাশের উপরে ফেলে রাখা হয়েছে! একইভাবে কেঁদে উঠেছিল শিশু মাইশা, তানভীর আর রাফি। শুধু শিশুরাই নয়, চল্লিশোর্ধ্ব যেসব মানুষের কোমল অনুভূতি অনেকটা ভোঁতা হয়ে গেছে তাদের অন্তরআত্মাও কেঁপে উঠেছিল সিনেমার শেষ দৃশ্যের বর্বরতা দেখে। অশ্রু গোপন করে ছলছল চোখে অনেককেই হল থেকে বের হতে দেখা গেছে। এভাবেই শুক্রবার বরিশালের অভিরুচি সিনেমা হলে ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি উপভোগ করেছেন বাবুগঞ্জ এবং মুলাদী উপজেলা থেকে আসা ৫ শতাধিক দর্শক।
বরিশালের অভিরুচি প্রেক্ষাগৃহে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ম্যাটিনি শোতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি বিনামূল্যে উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সাবেক পরিচালক আতিকুর রহমান আতিক। এসময় তিনি অভিরুচি সিনেমা হলটি সম্পূর্ণ ভাড়া করার পাশাপাশি বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা থেকে দর্শকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য নিজ উদ্যোগে ৬টি বাস ও শতাধিক মোটরসাইকেলের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ওই সিনেমাটি দেখে এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই।
আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান আতিকের উদ্যোগে মুজিব-একটি জাতির রূপকার সিনেমার ওই হল প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মৃধা আক্তার-উজ-জামান মিলন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ আজাদ, জাহাঙ্গীরনগর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আহসান হিমু খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল চিশতি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, কার্যনির্বাহী সদস্য মাঝি মাসুম রেজা, কৃষকলীগ সভাপতি মফিজুর রহমান পিন্টু, সম্পাদক জাহিদুর রহমান সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বাবুল, সাইফুল ইসলাম আতিক, ছাত্রলীগের আহবায়ক ফায়জুল হক, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রেশমা আহমেদ, মাধবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জয়নাল আবেদীন হাওলাদার প্রমুখ।
মুজিব-একটি জাতির রূপকার সিনেমার ওই হল প্রদর্শনীতে এসময় বাবুগঞ্জ এবং মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মুজিব-একটি জাতির রূপকার সিনেমাটি অনেক দর্শক সপরিবারে উপভোগ করেন। সিনেমাটি দেখার পরে শিশুসহ আবালবৃদ্ধবনিত দেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর নজিরবিহীন আত্মত্যাগের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে অভিভূত হন। একইসাথে সিনেমার শেষ দৃশ্যে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে সেই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সবাই। এসময় অনেক শিশুই ডুকরে কেঁদে ওঠে।
সিনেমাটি হলে নিয়ে বিনামূল্যে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘মুজিব সিনেমাটি সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের একটি স্পন্দন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদান সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশি জানা। তবে তাঁর ব্যাপকতা যে এতো বেশি সেটা এই সিনেমা না দেখলে অনুভব করা অসম্ভব। এই দেশ ও জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর কী সীমাহীন আত্মত্যাগ ছিল, কতটা নির্যাতন আর জেল-জুলুম তাকে সহ্য করতে হয়েছিল এই দেশের জন্য সেটা অনুমান করাও কঠিন। তাই মুজিব সিনেমাটি দেশের প্রতিটা নাগরিকের, বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের বেশি বেশি দেখা উচিত বলে আমি মনে করি। সেই ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধুর এই আত্মজীবনীমূলক সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি আমি।’
সিনেমা উপভোগ করার পরে প্রধান অতিথি বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার সিনেমাটি দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানতে পারবে। এই সিনেমার মাধ্যমে বাঙালির দেশাত্মবোধের চেতনা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ জাগ্রত হবে। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত এবং কলঙ্কিত করা হয়েছিল। আগামী দিনে আবার কেউ যদি এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে চায়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা এই সিনেমাটি দেখবে তারা অবশ্যই সেটা রুখে দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ #