নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনার বেতাগীতে বেশ কিছুদিন যাবৎ সরকারি চাল ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তায় খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে প্যাকেটজাত করে আসছেন একটি চক্র। কিন্তু নকল পণ্য প্রতিরোধ কিংবা বাজারজাত করণের ব্যাপারে আইন থাকলেও বড় কোনো শাস্তির নজির বেতাগীতে নেই বললেই চলে।

চালবাজদের বিরুদ্ধে সর্বদাই নিরব ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি চাল বস্তা পাল্টে প্যাকেটজাত করার বিষয়ে ও বিভিন্নভাবে প্রমাণ জোগাতে অনুসন্ধান করেন দৈনিক যুগান্তরের বেতাগী প্রতিনিধি।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সংবাদ আসে উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ডসংলগ্ন দক্ষিণ করুণা গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে আবদুল মন্নানের গোয়াঁল ঘরের মধ্যে বিভিন্ন দামী ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তায় প্যাকেটজাত হচ্ছে সরকারি চাল। যুগান্তরের ক্যামেরায় ধারণ করা হয় সেই অভিনব প্রতারণার ভিডিও, যেখানে ৫০ কেজি ওজনের ১৩৩টি বস্তা প্যাকেটজাত করা হয়।

এ বিষয়ে আবদুল মন্নানের ভাষ্য, সরকারি চালগুলো তার মামাতো ভাই বেতাগী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শামিম আহম্মেদের। তবে এ বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ওই যুবলীগ নেতা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনলেও, প্রায় আড়াই ঘন্টা পর মাত্র আট কিলোমিটার দুরত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান বেতাগী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নানা নাটকীয়তার মধ্যে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী চালবাজদের সঙ্গে চলে এসিল্যান্ড বিপুল সিকদারের আলোচনা।

পরে গভীর রাত হওয়ায় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে জানা যায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে চালবাজদের ১৩৩ বস্তা চাল। জব্দ করা হয়নি নকল ব্র্যান্ডিং করা কোনো চালে বস্তা কিংবা নকল প্যাকেটজাত করণে ব্যবহৃত কোনো যন্ত্রপাতি। তবে সরকারি চাল ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডিং বস্তায় প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়ার সত্যতা পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে আসা ওই কর্মকর্তা।

ঘটনাস্থলে বসে তিনি আরও জানান, ওই চাল কাবিটা ও কাবিখার একইসঙ্গে তিনি সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন চাইলেই সব আইন সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না তাই সহনশীলভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এর পর তিনি ঘটনাস্থল থেকে ব্র্যান্ডিং বস্তা সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জব্দকৃত মালামাল ও ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের শতাধিক প্যাকেটসহ ১৩৩ বস্তা চাল ফেরত দিয়ে দেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রিগান হালদার এবং ভ্রাম্যমাণ অভিযানে আসা সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা মো. শামিম আহম্মেদ বলেন, ‘এ সব চাল খাদ্যগুদম থেকে আমার ক্রয় করা। যার বৈধ কাগজপত্র আছে। সরকারি চাল ব্র্যান্ডিং প্যাকেট করা যায় কিনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা এভাবেই করে আসছি। এসব ব্যাপারে থানা ও প্রশাসন জানেন।

বেতাগী সহকারী কমিশনার(ভূমি) বিপুল সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ করুনা গ্রামের এক বাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের বস্তায় কাবিটার চাল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্যাকেটজাত করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৫০ ধারা অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে অভিযানে কোনো ধরনের মালামাল কিংবা প্রাপ্ত চাল জব্দ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।