বিড়ির ওপর বৈশম্যমূলক রাজস্ব কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে বরিশাল শহরে সমাবেশ করেছে বিড়ি শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সদর রোডে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

কারিকর বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সহযোগিতায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমকে বাঙালি।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন- ধূমপানের পক্ষে আমরা নই, কিন্তু ধূমপান বন্ধে বিড়ির বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ তা সিগারেটের বিরুদ্ধে নেই। এতো বৈষম্য কেনো? দেশে ৬০ হাজার কোটি টাকার সিগারেটের তামাক বছরে ছাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের ট্যাক্স বাড়ছে না। অথচ বছরে ৪ হাজার কোটির বিড়ি শিল্পের ওপর ট্যাক্স বাড়ছে।

আমরা একপাক্ষিক নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি। দেশের ২০ লাখ শ্রমিকের পক্ষে কথা বলছি। যারা সরকারের সাহায্য ছাড়া গড়ে ওঠা বিড়ি শিল্পে শ্রম দিয়ে যুগ যুগ ধরে নিজেদের কর্মসংস্থান করে যাচ্ছে। দরিদ্র, অসহায়, অচল শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে গড়ে ওঠা এই শিল্পটি গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কারিকর বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রণব চন্দ্র দেবনাথের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, বিড়ি একটি আদি ও পুরাতন শিল্প এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ কুটির শিল্প। অথচ ২০০ বছরের এই শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। বিড়ির ওপর পার্শবর্তী দেশ ইন্ডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কার শিথিল মনোভাব রয়েছে।

তাদের দেশীয় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখছেন। কিন্তু বহুজাতিক সিগারেটের পুঁজিবাদী কোম্পানিগুলো কম রাজস্ব কর দিয়ে এদেশে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছে।

অথচ সরকার সিগারেটের ওপর কর না বাড়িয়ে, প্রতি বছর বিড়ির ওপর কর বাড়াচ্ছে। তাই বিড়ি শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এখন সরকারের উচিত হবে, দেশীয় বিড়ি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ির ওপর অযৌক্তিক ধার্য করা রাজস্ব কর বাদ দেওয়ার।

এতে কারিকর বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক তুনাব হারিক হোসেন, রংপুর জেলা বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাভলু মিঞা, শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান এবং জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন- শহরের পাশাপাশি গ্রামে-গঞ্জে ঘরে বসে দরিদ্র নারী-পুরুষরা এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি এ আয় দিয়ে শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়।

কিন্তু সেই শ্রমিকদের কথা মাথায় না নিয়ে একটি মহল তা ধ্বংসের পায়তারা চালাচ্ছে। বর্তমানে অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ এবং ট্যাক্স অগ্রসর নীতির কারণে সিগারেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিড়ি বাজারজাত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে, শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু শ্রমিকদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিড়ি শিল্প ধ্বংস করা যাবে না। এ সময় বক্তারা বিড়ির ওপর সম্পূর্ণ রাজস্ব কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মানববন্ধনের আগে বরিশাল শহরের বিসিক এলাকা থেকে রোড-শো বের করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন। যা শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রোড-শো করে শরীয়তপুর থেকে বরিশালে এসে পৌঁছায় বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।’