চিকিৎসক সংকটে জেলার ১০০ শয্যার ঝালকাঠি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাও নিয়মিত ডাক্তারের দেখা পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঝালকাঠি আধুনিক সদর হাসপাতালকে ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার পর বাড়তি জনবল তো দূরের কথা, আগের পঞ্চাশ শয্যার জনবলই এখন নেই। হাসপাতালে ৫ জন সিনিয়র কনসালটেন্টসহ ২৩ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ১৫ জন ডাক্তারের পদই শূন্য।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসারের ৪টি পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য, রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ইএমও পদ শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির ২৫টি পদের মধ্যে দুটি, তৃতীয় শ্রেণির ২০ পদের মধ্যে ৫টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ২১ পদের মধ্যে ৪টি শূন্য রয়েছে।

প্রতিদিন এখানে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ডাক্তার না থাকায় অনেকেই ফিরে যান। ১শ শয্যার হাসপাতালে গড়ে রোগী থাকে দেড় শরও বেশি। যাদের অনেকেই সপ্তাহে একবারও ডাক্তারের সাক্ষাৎ পান না।

হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোজি বেগম বলেন, ৪ দিন আগে ভর্তি হয়েছি। প্রথমে ডাক্তার দুই পদের ওষুধ দিয়ে গেছে, আর বলছে পরের দিনের ডাক্তারকে দেখাতে। ৪ দিন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার আসেনি।

রঞ্জু নামের এক কিশোর রোগী বলেন, ১ সপ্তাহ আগে ওষুধ দিছে তাই খাবার পরে একটু ঠিক হইছি। শরীর কড়া এজন্য প্রস্রাব আটকে গেছে। ক্যাথলেটার পরছি। ক্যাথলেটার পরে থাকলে প্রস্রাব করা যায়, খোললে আর করা যায় না। এক সপ্তাহ পরে ডাক্তার এলে তার কাছে এ কথা জানালে তিনি বরিশালে রেফার্ড করে দেন।

হাসপাতালে এমন রোগীও পাওয়া গেছে যাদের প্রথমে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক ওষুধ দেওয়ার পর ২ দিনেও ডাক্তারের দেখা পাননি।

বুধবার জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুবায়ের আহমেদ জানান, সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট। এর মূল কারণ হলো এখানে যারা সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন, তারা পদোন্নতি পাওয়ায় অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন।

এখন মাত্র আমরা ৮ জন (পুরুষ ৫ ও মহিলা ৩) ডাক্তার দিয়ে আমরা ডিউটি করছি। যারা পুরুষ ডাক্তার তাদের সপ্তাহে ২-৩ দিন নাইট ডিউটি করা লাগছে। পাশাপাশি আউটডোর ও ইমার্জেন্সিসহ অন্যান্য ডিউটিগুলোও করা লাগছে।

এ সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রহিম বরিশালটাইমসকে জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে এখানে যথাযথ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চিকিৎসা প্রার্থীদের সেবা দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।