রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনকে পটুয়াখালীর বাউফলে নিজ গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার দুপুরে জোহর নামাজের পর হাইকোর্ট মসজিদে রাজীবের জানাজা শেষে তার মরদেহ নেয়া হচ্ছে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। রাতে গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ পৌঁছবে।

রাজীবের দ্বিতীয় নামাজের জানাজা বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৯টায় গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।

রাজীবের খালাতো ভাই জহিরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাজীবের খালাতো ভাই জহিরুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, বুধবার সকাল ৯টায় রাজীবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং জানাজা শেষে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে হাছান আলী চৌকিদার বাড়ির কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার সময় রাজীবের মরদেহ নিয়ে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন। গভীর রাতে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছবে।

রাজীবের বাবা হেলাল উদ্দিন দাশপাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে প্রায় ২৫ বছর আগে জমি কিনে ওখানেই বসতি গড়েন। হেলাল উদ্দিনের মূল বাড়ি ওই উপজেলার ইন্দ্রোকূল গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজীব সবার বড়।

এছাড়া ছোট দুই ভাই বাপ্পি ৮ম শ্রেণি এবং হৃদয় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। প্রথমে মা নাসিমা বেগম প্রায় ১৫ বছর আগে এবং পরে বাবা হেলাল উদ্দিন প্রায় ৬ বছর আগে মারা যান। তাদের মৃত্যুর পর বড় খালা জাহানারা বেগম বোনের তিন ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকায় খালার বাড়িতে থেকেই তিন ভাই লেখাপড়া করে আসছিলেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান বরিশালটাইমসকে বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র নিহত রাজিবের দাফনের যাবতীয় খরচ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন বহন করবে।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজের ওই ছাত্র। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে।

দুই বাসের প্রচণ্ড চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সে হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।

শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর গত সোমবার থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। সে থেকে আর জ্ঞান ফিরেনি তার।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে।

পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে নিজের আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ভাইয়ের খরচ চালানোর সংগ্রাম করে আসছিলেন রাজীব।