ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়া ‘মা মঞ্জিল’ নামে এক বাসা থেকে তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটসহ মো. সায়েম রাজ (১৯) নামের ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে শৈলকুপা থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সায়েম রাজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামের আজম খানের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রেমঘটিত বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর গালফ্রেন্ডের সাথে বনিবনা না হওয়ায় রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। সায়েমের এক আত্মীয় খোঁজ করতে এসে তাকে বারবার ডাকার পর কোন সাড়া পাওয়া না গেলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট সকলেই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমানের সহয়তায় শৈলকুপা থানার ওসি দরজা ভেঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ ও তিনটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেন।

ওই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পেছনে তিন পৃষ্ঠার উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে উল্লেখ্য আছে, ‘মানুষের কল্পনা শক্তি যে এত প্রখর তা হয়তো জানাই হতো না যদি না আজকের বিকেলটা না থাকতো। আচ্ছা মানুষের কল্পনা শক্তি এতো প্রখর কীভাবে হতে পারে?

বিকেলে বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে গায়ে একটি বসন্তের বাতাস এসে লাগল। অন্তরে একটা দোলা দিল। বসন্তের আগমনে যে বাতাস এসে আমার গায়ে লেগেছিল তা আমার মনে বসন্তের নতুন ফুল ফোটাতে পারেনি।’

‘পকেট গেট দিয়ে যেই শহীদ মিনারে পেছনে গিয়ে বসলাম তখনই মনের কল্পনায় অগোছালো জিনিস গুলো ভেসে উঠল। পলক ফেলতেই দেখি এই গগনে তোমার একটা হাসিমুখ ফুটে উঠেছে। তখন থেকে শুধু আকাশের পানেই চেয়েছিলাম। মনতো খুশিতে উতালা। শুধু এইটুকু চাই এই রকম সময় আমার জীবনে বারবার ফিরে আসুক। বাবু তোমাকে অনেক ভালবাসি। জীবনের প্রতিটি মোরে তোমাকে চাই। তুমি কোনও দিন হয়ত আমার হবে না। অন্য কারো হবে। তোমাকে আমার থেকে বেশী কেউ কোনদিন ভালবাসতে পারবে না। যেই দিন শেষ প্রশ্বাস নেব ওই দিন হয়ত তোমাকে একটু বুঝার সুযোগ দিব যদি বুঝতে পার ওই দিন। আমি পুরো ছন্ন ছড়া হয়ে পড়েছি আমায় বেধে রেখ চিরদিন।’

শৈলকুপা থানার নির্বাহী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারের এক বাসা থেকে ফ্যানের সাথে গলায় দেওয়া অবস্থায় সায়েম রাজ নামের ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ ও সুইসাইড পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি এই ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কোনও অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের এই ধরনের পথ বেছে নেওয়া উচিত নয়।’