সম্প্রতি কলকাতা শহরে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে গিয়ে না পাওয়ায় আলোচনায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণী নিশাত রিমা।

দক্ষিণ২৪পরগনার জয়নগর মজিলপুরের মেধাবী ছাত্রী নিশাত রিমা লস্কর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। পড়ালেখার সুবিধার জন্য ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন নিশাত।

এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি বেশ আলোচনায় আছে। বহু মানুষ এ বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে তার নিজের ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

‘মুসলমান হওয়ার অপরাধে নিশাত রিমা লস্করকে কলকাতায় কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়নি। কেউ বলতে অনলাইনে যারা বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেয় তাদের অনেকে; যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন নিশাত রিমার বাবা।’

‘নিশাত রিমা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে অঙ্কে ১০০ তে ১০০ পেয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর গ্রামের বাড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ প্রতিদিন ট্রেনে যাওয়া আসা করতে হতো। নিশাত রিমা যদি কলকাতার মুসলমান এলাকায়, পার্ক সার্কাসে, মেটিয়াবুরুজে, খিদিরপুরে একটি ঘর চাইত তাহলে পেত। কলকাতার হিন্দু এলাকায় মুসলমানদের বাড়ি ভাড়া দেয়া হয় না, এ নতুন খবর নয়।’

‘আমি হিন্দু এলাকায় বাড়ি ভাড়া পেয়েছিলাম। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল। কারণ আমি তখন লেখক হিসেবে কলকাতায় পরিচিত। আমার অনেক বই বেরিয়েছে কলকাতা থেকে, দু’ দুবার আনন্দ পুরস্কার পেয়েছি।’

‘আমার যদি জনপ্রিয়তা না থাকত, আমি নাস্তিক হলেও, আমার নামটি ‘মুসলমান নাম’ বলে হিন্দু এলাকায় বাড়ি ভাড়া পেতাম না। আমাকে মুসলমানের বস্তিতে যেতে হতো বাড়ি পেতে।’

‘মোদ্দা কথা, মুসলমান নামের কাউকে ভালো এলাকায় বাড়ি ভাড়া পেতে হলে হয় বিখ্যাত হতে হবে, নয়তো স্বামী বা স্ত্রীর একজনকে হিন্দু হতে হবে।’

‘বাংলাদেশের প্রচুর মুসলমান হিন্দুদের ঈর্ষা করে, ঘৃণা করে, কিন্তু তারপরও শহরগুলোয় হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি বাস করে। কলকাতায় সে রকম দেখিনি।’

‘শিক্ষিত হলে ছুৎ মার্গগুলো চলে যায়, জানি। কিন্তু দুঃখ হলো, ভেতরের ধর্মবিশ্বাস শিক্ষিত লোককেও অশিক্ষিত বানিয়ে রাখে।’