নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন সোয়াদ ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

তাদের বিক্ষোভে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল ৭টার দিকে প্রথমে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকরা। পরে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

সকাল ৮টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সেখন থেকে তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, ২২ সেপ্টেম্বর তাদের বকেয়া বেতন-বোনাস দেয়ার কথা দিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে শ্রমিকদের না জানিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয় মালিক পক্ষ। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক আহত হন। সেই সঙ্গে সাতজন শ্রমিককে আটক করা হয়। আহত শ্রমিকদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের এসপি জাহিদুর রহমান বলেন, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। এ সময় তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে তিন পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো শ্রমিককে আটক করা হয়নি। তাদেরকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সোয়াদ ফ্যাশনে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ৫-৬ মাস ধরে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করছে না কারাখানা কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বোনাস, ছুটি ও রিজার্ভ ফান্ডের টাকাও দেয়া হয়নি। এই অবস্থায় পোশাক শ্রমিকরা বাসা ভাড়াসহ সংসার চালানো নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছন তারা।

সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিক নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ কারাখানা বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। আমরা ঘর ভাড়া দেব কোথায় থেকে আর খাবার জোগাড় করব কোথায় থেকে? আমরা এই মুহূর্তে কোথায় চাকরি পাব? আমাদের পরিবার নিয়ে হতাশায় আছি। আমরা আমাদের সব পাওনা চাই। আমাদের ৫ মাসের বেতনের দাবিতে বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছি।

একই কারখানার শ্রমিক মো. সবুজ বলেন, আমরা বেপজার কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। এই সুযোগে আমাদের বেতন-বোনাস নিয়ে টালবাহানা শুরু করে মালিক পক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে বিক্ষোভে নেমেছি।

এদিকে, বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা সকাল থেকে ইপিজেট গেট সংলগ্ন আদমজী-ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখায় সড়কের দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক অবরোধ করে এখনো বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।