নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করবেন। রোববার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাহাদত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- তফসিল ঘোষণার তারিখ ঠিক হলেও গতকাল রোববারের বৈঠকে মনোনয়নপত্র দাখিল ও ভোটগ্রহণের তারিখসহ বিস্তারিত সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি। ৮ নভেম্বর কমিশনের আরেকটি সভায় এ সময়সূচি নির্ধারণ এবং সিইসির ভাষণ রেকর্ডিং সম্পন্ন করার পর সন্ধ্যার দিকে তা প্রচার হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইসি সূত্র জানায়, ৬ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা জোটের সংলাপকে বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে ডিসেম্বরের ২০ বা ২৩।

তফসিল ঘোষণা বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের দেওয়া ঐক্যফ্রন্টের চিঠি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় আরও বলেন, ‘আমাদের ৪ নভেম্বর (গতকাল) তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল। তবে সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে আমরা ৮ তারিখে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তবে রাতে নির্বাচন কমিশন সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ঐক্যফ্রন্ট ৮ নভেম্বরের আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের সুযোগ পাবে।’

গত শনিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমরা ৮ তারিখ পর্যন্ত যেতে পারছি না। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫টি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসতে চায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।’ ওই দিনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে রাজনৈতিক দল/জোটগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের দিনক্ষণ ঘোষণা না করার অনুরোধ জানান।

তফসিল ও ভোটগ্রহণের মধ্যে কত দিনের ব্যবধান থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে রোববার শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘একটা স্ট্যান্ডার্ন্ড সময় অনুযায়ী আমরা ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করব। এটা ৪৫ দিনের কাছাকাছি হতে পারে।’

১৮ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলকে সিইসি জানিয়েছিলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ হয় ১ নভেম্বর। এ অবস্থায় ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, ২ ও ৩ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ৪ থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ১ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে এ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সাক্ষাৎ শেষে সিইসি কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ৪ নভেম্বর তফসিল নিয়ে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ইসি কর্মকর্তারা ডিসেম্বরের ২০ অথবা ২৩ তারিখ ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে জানিয়ে বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর ভোটগ্রহণ হয়েছে তফসিল ঘোষণার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের ব্যবধানে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের ৪৫ দিন আগে। ২ নভেম্বর ঘোষিত ওই তফসিলে ১৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে বিরত থাকলে অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ২৩ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ২৯ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবধানটি ছিল ৪০ দিনের।

এদিকে এবার আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে- ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। আর জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানায়, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের খুব কাছাকাছি যেন নির্বাচনের তারিখ না পড়ে। ২০ ডিসেম্বরের আগে বা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারিখ ফেলারও প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। সে ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর এই তিন দিন বড়দিন উৎসব উপলক্ষে বাদ রেখে এর আগেই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধি চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন। গত শনিবার ও রোববার দুই দফা সভা শেষে কমিশন এ বিধিমালা চূড়ান্ত করে। গত বুধবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি করেন। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারে পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহাদত হোসেন চৌধুরী রোববার বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কতগুলো আসনে হবে তা সিদ্ধান্ত হয়নি।’ রোববারের সভায় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।’