মুক্তির মিছিলে রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ও রায়হান রাফি পরিচালিত ‘দহন’ ছবিটি। মুক্তির আগেই নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনায় রয়েছে এ ছবিটি।

ছবিটির ফার্স্ট লুক ও গান প্রকাশ হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে প্রাণবন্ত সিয়ামকে। প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, তার চরিত্রের নাম এখানে তুলা। সে নেশাগ্রস্ত এক যুবক।

এদিকে আরও জানা গেছে, সিনেমাতে দেখা যাবে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আলোচিত জজ মিয়া নাটকেরই গল্প। মূলত এই ঘটনার ছায়া অবলম্বনেই নির্মিত হয়েছে ‘দহন’।

জজ মিয়ার চরিত্রটিকেই সিনেমায় খানিকটা ঘষে মেজে হাজির করা হয়েছে নেশাগ্রস্ত তুলা চরিত্রে। ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যার জীবন। টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় গিয়ে নানা রকম অপরাধ করে বেড়ায় সে। কখনো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া, কখনো বোমা ফাটানো, কখনো কাউকে খুন করাই তুলার কাজ।

হঠাৎ এক বিরাট অপরাধে ফেঁসে যায় সে। তাকে বানানো হয় রাজনৈতিক চালের গুটি। যার কাঁধে বিরাট এক হামলা পরিচালনার অভিযোগ।

তুলা বুঝতে পারে এই চক্রান্ত থেকে তার রেহাই নেই। সে আটকে গেছে বাঘবন্দির খেলায়। কোনো অপরাধ না করেও নিয়তির কাছে হার মেনে প্রস্তুত হয় শাস্তির। কিন্তু একজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বের হয়ে আসল তথ্য। নির্দোষ তুলার বদলে ফেঁসে যায় খারাপ স্বভাবে কিছু ক্ষমতাবান।

ছবিতে তুলার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সাংবাদিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মম। সিয়ামকে গ্রেফতার করা পুলিশের চরিত্রে আছেন শিমুল খান। আর সিয়ামের বিপরীতে পূজা চেরিকে দেখা যাবে গার্মেন্টস কন্যা আাশার চরিত্রে। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে মুনীরা মিঠুকে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ ও পরিচালক গল্প নিয়ে মুখ না খুললেও এমনটাই জানা গেল ছবিটি সম্পর্কে। ছবিটি নির্মাণের নৈপথ্যে জড়িয়ে আছেন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যিনি গল্পের ছলে জজ মিয়া নাটক ও ২১ গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরতে চান দেশবাসীর কাছে।

যেখানে বার্তা দেয়া হবে- অন্যের জীবনকে বিপন্ন করে ক্ষমতার রাজনীতি নয়, দেশ ও দেশের মানুষের জন্যই রাজনীতি হওয়া উচিত। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে সন্ত্রাস ও মাদককে নিরুৎসাহিত করতে নির্মিত হয়েছে ‘দহন’।

এরইমধ্যে ছবিটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শকের মনে। আসছে ডিসেম্বরেই এটি মুক্তি পাবে। তবে তার আগে আগামী ১০ নভেম্বর ‘দহন’র বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। এমনটাই জানালেন নির্মাতা রায়হান রাফী।

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছবিটি দেখার জন্য মনস্থির করেছেন এটা আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার। তবে প্রদর্শনীর সময় ও স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল অনুযায়ী শিগগিরই ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।’

এদিকে অভিনেত্রী মনিরা মিঠু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ তারিখে ছবিটা দেখবেন। ছবিটি দেখে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর চোখের পানি পড়বে। এটা আমি নিশ্চিত। ধন্যবাদ জাজ মাল্টিমিডিয়া, ধন্যবাদ ‘দহন’ টিমকে।’

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর গ্রেনেড হামলাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় জজ মিয়াকে।

জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সিআইডির তৎকালীন তিন কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান।

গ্রামের সহজ-সরল এই যুবককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে জজ মিয়া নাটকের জন্ম দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মামলাটি অধিক তদন্তের পর এর রহস্য উন্মোচিত হয়। জানা যায়, জজ মিয়া কোনোভাবেই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত নন।