আগামীকাল ভয়াল ১২ নভেম্বর। ভোলাসহ উপকূলবাসীর জন্য বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। এক এক করে ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি স্বজন হারা মানুষের। ১৯৭০ সালের এই দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে ধ্বংস লীলায় পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষত বিক্ষত করে দেয় স্থানীয় জনপথ। মৃত্যু পুরীর হাত থেকে রক্ষা পেতে ছুটাছুটি করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তারা। ওই ঝড়ে ভোলায় হারিয়ে যায় দেড় লক্ষাধিক প্রাণ। নিখোঁজ হয় সহস্রাধীক মানুষ। দুর্গম এলাকায় হতদরিদ্রদের একমাত্র আয়ের উৎস গবাদি পশুগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেই ঝড় আজো কাদায় দ্বীপবাসীকে।

তৎকালীন সময় তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটা দুর্বল থাকায় উপকূলে অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বভাস পায়নি। এ সময় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮/১০ ফুট উচ্চতায়। কেউ গাছের ডালে, কেউ উচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও ১০দিন পর্যন্ত তাদের অভূক্ত কাটাতে হয়েছে। বেড়িবাঁধ, জলাভূমি, জঙ্গলসহ বিভিন্ন প্রান্তে স্বজন হারা মানুষগুলো তাদের প্রিয়জনের লাশ খুঁজে পায়নি। গত ৪৮ বছরের সব কয়টি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ৭০’র ঝড়টি সব চাইতে ভয়ানক বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন সেই ঝড়ের কাহিনী।

তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার ভোলার সাংবাদিক ও বর্তমান স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি এবং দৈনিক বাংলার কণ্ঠের সম্পাদক এম হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ছোট একটি ক্যামেরা নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে শিবপুর এলাকায় গিয়ে দেখি গাছে গাছে জুলন্ত লাশ এবং গবাদি পশু। ছবি তুলে ভোলা মহকুমার প্রসাশনের বাসায় গিয়ে ‘ভোলায় গাছে গাছে লাশ জুলছে’ এই শিরোনামে একটি নিউজ পাঠাই। তা প্রকাশের পর পরই সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি প্রদান করেন।

উপকূলীয় জেলাগুলির মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলায়। এ সময় ভোলার এক তৃতীয়াংশ লণ্ডভণ্ড হয়। ১২ নম্বর মহা বিপদ সংকেতের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসটি অলৌকিকভাবে কেড়ে নিয়ে যাদের লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। সেই ভয়াল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানিতে প্রায় মৃত অবস্থায় গভীর সাগরের থেকে অনেকে উদ্ধার হন। যখন তাদের জ্ঞান ফিরে তাদের বেশীরভাগ মানুষ ছিলেন আহত অবস্থায় হাসপাতালে।

এদিকে, ৭০’র বন্যার পর সিডর, আইলা, মহাসেনের মতো ঝড় বয়ে গেলেও উপকূলবাসীর জন্য আজও পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা হয়নি। যার ফলে ভোলার সমগ্র উপকূলের মানুষ অনিরাপদ।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর কর্মকর্তা আবুল হাসনাত তছলিম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ভোলায় ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। যা আগে ছিল না। ১৯৭২ সালে সিপিপির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে। সমুদ্রের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রত্যেকটি উপজেলায় সিপিপি তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সকল মানুষকে সচেতন করতে থাকেন এবং ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। এর ফলে এখন আর কোনো এরকম ঘূর্ণিঝড় হলেও প্রাণনাশের আশঙ্কা নেই।