বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম দিন গতকাল চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে থাকায় সেখান থেকেই এবার তিনটি আসনে তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী।

খালেদার পক্ষে মনোনয়ন ফরম কেনার চার ঘণ্টা পর বিএনপির পাঁচ জন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের মধ্যে থাকা দুজন নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, সেখানে তারা খালেদার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিয়েছেন ও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, বগুড়া ও ফেনী থেকে তিনটি আসনে খালেদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

সাবেক স্পিকার ও দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনোনয়ন ফরমগুলো আজকে খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো হবে। এখানে তার স্বাক্ষর লাগবে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বগুড়া-৬, ৭ ও ফেনী-১ আসনের প্রার্থিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে।

খালেদার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুটি মামলায় সাজার রায় থাকায় তার প্রার্থী হতে আইনগত কোনো বাধা রয়েছে কি না জানতে চাইলে মওদুদ বলেন যে, তাদের আইনজীবীরা শিগগিরই আইনি বাধার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসবেন।

২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে খালেদার বিরুদ্ধে সাত বছরের সাজার রায় এসেছে। এর পর দিনই হাইকোর্টে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আইনি লড়াইয়ে হেরে পাঁচ বছরের সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট খালেদার আপিল খারিজ করে সাজা বৃদ্ধি করেন।

এছাড়া খালেদার বিরুদ্ধে এখন তিন ডজনেরও বেশি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় তিনি জামিন পেলেও বেশ কয়েকটিতে জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। ফলে সহসাই তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন তেমনটিও বলা যাচ্ছে না।

তবে এই দুই মামলারই রায়ের সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় খালেদার আইনজীবীরা আপিল করতে পারেননি। তারা মনে করছেন নির্বাচনে খালেদার প্রার্থিতায় যেন এই রায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য অবিলম্বে আপিল করা প্রয়োজন।

নিম্ন আদালতের রায়ে সাজা মাথায় নিয়ে খালেদা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না ইতিমধ্যে সে ব্যাপারে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সাজার কারণে সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কখন একজন ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন সেটি নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্তত দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের একাধিক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কোনো মামলার চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন না বা সাংসদ পদ থেকে অপসারিত হবেন না।

এখানে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া খালেদা জিয়ার জন্য সুবিধাও হতে পারে। কারণ সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদমতে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলেই চলবে না, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণ নৈতিক স্খলনজনিত হতে হবে। সার্টিফায়েড কপি না পাওয়া পর্যন্ত ইসি আইনগতভাবে অনুমোদন করতে পারেন না যে বিএনপির চেয়ারপারসন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন কি না। ফলে এদিক থেকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি না থাকার সুবিধা পাবেন খালেদা।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গতকাল নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, খালেদার মনোনয়নপত্রের ভাগ্যে কী ঘটবে তা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে তিনি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন তার আপিল নিষ্পত্তি করবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে গেলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তারা খালেদার মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।’